কুতুবপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক ও বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ছয়টি ইটভাটা, হুমকিতে কৃষি-জনস্বাস্থ্য

কুতুবপুর প্রতিনিধি
কুতুবপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক ও বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ছয়টি ইটভাটা। এতে হুমকিতে পড়েছে কৃষি-জনস্বাস্থ্য। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ছয়টি ইটভাটার কোনোটিরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসনের বৈধ লাইসেন্স নেই। এর মধ্যে পাঁচটি ইটভাটা নয়মাইল এলাকায় মাত্র পৌনে এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রধান সড়কের পাশ ঘেঁষে ও ফসলি জমির একেবারে নিকটে গড়ে উঠেছে।
ইটভাটাগুলো হলো— জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মোতালেবের মেসার্স আর এম ব্রিকস, মো. আখির উদ্দিনের জনতা ব্রিকস, আব্দুল কাদেরের একতা ব্রিকস, আব্দুল খালেকের মেসার্স ডিএমএসবি ব্রিকস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, মো. ইকরামুল হকের এইচবি ব্রিকস এবং মো. আলতাফ হোসেনের এমইপি ব্রিকস।
সরেজমিনে ভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে ব্যবসা শুরুর জন্য সবকটি ভাটা প্রস্তুত করা হয়েছে। কয়েকটি ভাটায় ইতোমধ্যে ইট কাটা শুরু হয়েছে। এমইপি ব্রিকসে ইট পোড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা জানান, ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনের ফলে ধুলাবালিতে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়া ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি সড়ক ভেঙে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এমইপি ব্রিকসের পাশেই রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত সরকারি আবাসন। আবাসনের বাসিন্দা আ. রশিদ বলেন, দিনরাত গাছের কাঠ পোড়ানোর কারণে বিষাক্ত ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে থাকে। আবাসনের অধিকাংশ মানুষ এখন শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে।
নয়মাইল এলাকায় অবস্থিত পাঁচটি ইটভাটার মধ্যেই রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকের সিএইচসিপি নিপা মোনালিসা বলেন, সারাদিন কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির মধ্যে রোগীদের সেবা দেওয়া খুব কষ্টকর।  অনেকেই ভাটার কারণে এখানে আসতে চায় না।
এ বিষয়ে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্র চাচ্ছি, কিন্তু পাশেই কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় তা দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য জেলা প্রশাসনও লাইসেন্স দিচ্ছে না। তবে ক্লিনিকটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। তিনি আরও বলেন, ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকলেও বিষয়টি সবাই জানে, প্রশাসনকে অবহিত করেই আমরা ব্যবসা করছি।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ ইটভাটায় মাঝে মাঝে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হয়, তবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এলাকাবাসীর দাবি  অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা হলে পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *