মানবেতর দিন কাটছে আলমডাঙ্গার স্বামী-সন্তানহীন মনোরার

আলমডাঙ্গা অফিস
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের এক কোণে নীরবে বেঁচে আছেন মনোরা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি আজ সম্পূর্ণ একা। নেই কোনো স্বামী, নেই কোনো সন্তান আপন বলতে কেউ না থাকায় বোনের বাড়িতে মাথাগোজার ঠাঁই হলেও পাইনি ক্ষুধার জ্বালা নিবারন করার দিশা। মানুষের দয়ার ওপর ভর করেই কাটছে তার প্রতিটি দিন। ভিক্ষাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথে পথে ঘুরে বেড়ান দু’মুঠো খাবারের খোঁজে। কারও দরজায় দু’মুঠো চাল, কারও কাছে সামান্য টাকা এই সামান্য নিয়েই কোনোরকমে চলে তার দিন। ক্ষুধা, অসুস্থতা আর অনিশ্চয়তা যেন তার নিত্যসঙ্গী। অসুখে পড়লে পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই, রাত নামলেই মাথা গোঁজার মতো নির্ভরতার আশ্রয় বলতে বাঁশ ঝাড়ের নিচে অন্যের জমিতে একটি কুঁড়ি ঘর।
চোখে জমে থাকা অব্যক্ত কষ্ট আর মুখের নীরব দীর্ঘশ্বাস যেন বলে দেয় এই জীবনে কত না পাওয়া আর বঞ্চনার গল্প লুকিয়ে আছে। সমাজের আলোুঝলমলে উন্নয়নের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এমন অসহায় মানুষগুলোর বাস্তব চিত্রই মনোরার জীবনগাথা। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও হয়নি বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা।
মনোরার মতো আরও কত অসহায় স্বামী সন্তানহীন নারী আজও আমাদের চারপাশে নীরবে কষ্ট বয়ে চলেছেন। যাদের জীবনের শেষ সম্বল শুধু মানুষের করুণা আর মানবিকতার অপেক্ষা। প্রশ্ন থেকেই যায় এই মানুষগুলোর দায় কি শুধুই তাদের নিজের? নাকি সমাজ ও রাষ্ট্রেরও কিছু দায়িত্ব আছে?
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই নামে কোন বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার কোন আবেদন আমার দপ্তরে জমা পড়েনি, আবেদন জমা পড়লে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী শরাফত হোসেন রাসেল বলেন, সমাজে এমন অসংখ্য অসহায় মানুষ আছে কেউ অনাহারে থাকছে। এই অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িক্ত রাষ্ট্রের। এছাড়াও সমাজের যারা ধনাত্নক ব্যাক্তি আছে তারাও এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রতিবেশী অনাহারে থেকেও, যদি আমরা নিজের পেট ভরে শান্তিতে ঘুমাতে পারি—তবে সেটা আসলে ঘুম নয়,ওটা বিবেকের গভীর অচেতনতা।কারণ মানুষের ক্ষুধা শুধু পেটের নয়, মানুষের ক্ষুধা ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর মানবিকতারও। পাশের ঘরে কেউ না খেয়ে কাঁদছে, আর আমরা চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমাই এই নীরবতাই সবচেয়ে ভয়ংকর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *