মুন্না রহমান, স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর অবশেষে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। মানুষের মনে নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় ছিল তা দূর করেই তফসিল ঘোষণা করা হলো। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে আনন্দের ঘনঘটা।
গতকাল রাতে জেলা প্রশাসন থেকে জেলার সকল বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার অপসারণ এর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরে জেলার অনেক প্রার্থীই নিজ হাতে ও দলীয় নেতা কর্মিদের সাথে নিয়ে ব্যানার এবং ফেস্টুন অপসারণ করতে দেখা যায়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ নিজে ও দলীয় কর্মিদের সাথে নিয়ে ব্যানার অপাসারণ করতে দেখা যায়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নির্বাচনের সকল নিয়মকানুন মেনে নির্বাচনী প্রচারণার আহ্বান জানান অনেকেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাসিন্দা আশিকুর রহমান শান্ত বলেন, এই প্রথম আমি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যাব। তফসিল ঘোষণার পরপরই মনের মধ্যে একটি আনন্দ বিরাজ করছে। মনে হচ্ছিল সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে কিনা। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর মনের সকল সংশয় দূর হয়েছে। আমার মতই অনেক তরুণেরা অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন মানুষ নির্বাচনের স্বাদ পায়নি। গতকাল তফসিল ঘোষণার পর জনমনে একটি আনন্দ বিরাজ করছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আমি মনে করছি। দীর্ঘ ষোল বছর একটি ফ্যাসিস্টের সঙ্গে লড়াই শেষে অবশেষে আসতে যাচ্ছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। আমার মত সাধারন অনেক মানুষই অপেক্ষায় ছিল এই নির্বাচনী তফসিলের। তরুণেরা তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করে নিতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।
সরোজগঞ্জ বাজারের চা দোকানী সুমন হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের ব্যবসা জমে ওঠে। মানুষ নানান রকম রাজনৈতিক আলাপচারিতা সারে আমাদের এই দোকানগুলোতেই। নির্বাচন আসলে চায়ের দোকানগুলোতে যেন একটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সদর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মতিউর রহমান মিশর বলেন, জনমনের সংশয় আজ দূর হয়েছে। দীর্ঘ ষোল বছর যারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। গতকাল তফসিল ঘোষণার পরপরই চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার বইছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা গেলে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, সমৃদ্ধি রাষ্ট্র গঠন সম্ভব।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচারের জন্যই জুলাই আন্দোলন করা হয়েছে। আন্দোলনের একটি বড় অংশ হল মানুষের অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। ইতোমধ্যেই জাতীয় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও নির্বাচন নিয়ে কিছু সংশয় থেকেই যায়। সাধারণ মানুষ সুষ্ঠুভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে তো। মানুষ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলেই আমাদের আন্দোলন সফল হবে বলে আমি মনে করি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহমেদ বলেন, গতকাল তফসিল ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গাবাসী বেশ উৎফুল্ল। সকলের একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আগামীতে হতে যাচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন ভোটাধিকারের স্বাদ পায়নি তারা আস্বাদন করবে নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। আমি দেখেছি গতকাল থেকে চুয়াডাঙ্গার ফেস্টুন, ব্যানার গুলো অপসারণ করা হয়েছে। সব দল মত নির্বিশেষে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গাতে।
তফসিল ঘোষণার পরই শহরের বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কার্যালয়ে জ্বলে উঠেছে আলোর মশাল। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে উৎসাহের মাত্রা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে গ্রাম, পাড়া, মহল্লা জুড়ে এখন আলোচনা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। অনেকেই হিসাব করছেন চুয়াডাঙ্গা ২ টি সংসদীয় আসন থেকে চুড়ান্তভাবে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামি থেকে কে নমিনেশন পাচ্ছেন। আর কিছুদিন পরে সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।



