চুয়াডাঙ্গা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

স্টাফ রিপোর্টার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় চুয়াডাঙ্গায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ৩ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর পক্ষ থেকে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গার ঐতিহাসিক টাউন ফুটবল মাঠে এ দোয়া পরিচালনা করেন মওলানা মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি।
বিশেষ দোয়া মাহফিলকে ঘিরে জেলায় সৃষ্টি হয় অন্য রকম পরিবেশ। দুপুরের পর থেকেই ছোট-বড় দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করেন টাউন ফুটবল মাঠে। আলেম-ওলামাসহ কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ সাংস্কৃতিক সংগঠক, কেউবা সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। নানা বয়স, নানা পরিচয়ের এই মানুষেরা একসাথে এসে দাঁড়ান খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় প্রার্থনার মোনাজাতে।
এর আগে দুপুর ১২টায় পাঁচকমলাপুর হাজী শামসুজ্জোহা জামি’য়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কুরআন খতম করেন। কুরআন খতম শেষে দুটি খাসি ছাগল সদকাহ করা হয়। বেলা বাড়তে থাকলে টাউন ফুটবল মাঠে শুরু হয় দোয়া মাহফিল। মাঠেই সবাই আসরের নামাজ আদায় করেন। এরপরই বিশেষ মোনাজাত। বহু মানুষ মোনাজাতের সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এর আগে বেলা তিনটায় দোয়া মাহফিল শুরু হলে সেখানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর (বিডিচ্যাম)-এর প্রেসিডেন্ট, সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। তিনি বলেন, ‘আজকের আয়োজন কোনো দলীয় অনুষ্ঠান নয়। চুয়াডাঙ্গার ২১টি সামাজিক সংগঠন বিএনপি নেতাদের অনুরোধ করেছিল, কারণ বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির সম্পদ নয়, তিনি বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের নেত্রী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা যে মায়ের জন্য দোয়া করতে এসেছি, ‘মা’ শব্দ আসলেই বুকের ভেতর কেমন একটা নাড়া দেয়। যে মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরে আমাদের জন্ম দিয়েছেন, শৈশবে একটি পিঁপড়া কামড়ালেও যিনি ছুটে এসে ব্যথা সয়েছেন, সন্তানের জন্য এর চেয়ে বড় ত্যাগ পৃথিবীতে আর কেউ করতে পারে না। শীতের রাতে আমরা দেরি করে বাড়ি ফিরতাম, সবাই ঘুমিয়ে গেলেও মা জেগে থাকতেন গরম ভাত নিয়ে। আমরা কখনো জানতে চাইতাম না, মা খেয়েছেন কি না। তেমনি আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়াও ছিলেন একজন গৃহিণী, বিধবা নারী। তাঁর দুই সন্তান। আরাফাত রহমান কোকো যখন মালয়েশিয়ায় মৃত্যুশয্যায়, মিথ্যা মামলার কারণে তিনি দেশে বন্দি ছিলেন, সন্তানের কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখার সুযোগও পাননি। বড় ছেলে তারেক রহমানকে আপনারা জানেন- যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বছরের পর বছর লেগেছে তাঁর মেরুদণ্ড সোজা করতে। সেই ছেলেকেও তিনি দেখতে যেতে পারেননি। কিন্তু দেশের মানুষকে ভুলে যাননি। আজ তিনি অসুস্থ, তাই আমরা এসেছি তাঁর জন্য দোয়া করতে।’
সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘আজ এখানে আলেম-ওলামা আছেন, দেড় থেকে দুইশ হাফেজ আছেন, তালেবায়ে এলেম আছেন, মাদ্রাসার ছাত্র আছেন- একটি বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী উপস্থিত। আমরা এই সুযোগে আমাদের মা-বাবার জন্য, চুয়াডাঙ্গার সব অসুস্থ মানুষের জন্য এবং সারা বিশ্বের সব অসুস্থ মায়ের জন্য দোয়া করব। আমাদের নেতারা বলে আসছেন- উনি আমাদের মা। লক্ষ-কোটি মানুষের মা। তাই আজকের দোয়া তাঁর সুস্থতার জন্য। যে গণতন্ত্রের জন্য তিনি আপস করেননি, ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য জীবনভর লড়েছেন, আল্লাহ যেন তাঁকে সুস্থ করে সেই গণতন্ত্রের সুবাতাস দেখতে দেন।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুফতি জুনায়েদ হাবিবি চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান, আজকের দোয়া পরিচালনা করবেন। আমরা সবাই যেন দোয়ার মাধ্যমে গোনাহ্ মাফ পেতে পারি, মা-বাবার হক আদায় করতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা- আমাদের দেশনেত্রী যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। চুয়াডাঙ্গার মানুষকে আমি ভালোবাসি, এবং যতদিন বেঁচে থাকব ভালোবেসে যাব।’
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান বলেন, ‘আজকের এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বসাধারণ মানুষ। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ- কারণ আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য সারাদেশে দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অরাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ নানা স্থানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার মানুষও আমাদের নেত্রীকে যে সম্মান দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা সবাই প্রাণ খুলে দোয়া করবেন। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের সংকটময় মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছিলেন, তিনি তা তিনবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমরা সবাই মন থেকে দোয়া করি- আল্লাহ যেন অতি দ্রুত তাঁকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’
অনুষ্ঠনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য লে. কর্নেল অব. সৈয়দ কামরুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন, চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি হামিদুর রহমান, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি রন্জু, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হবি, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মঙ্গল, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রেজা, শাহারীন হক মালিক, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আখতার হোসেন জোয়ার্দার, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিণ্টু, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম এম আর মুকুল, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফ উর নাহার, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, সদস্যসচিব ও বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি শরীফ উর জামান সিজার, সাধারণ সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা জাসাস-এর সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহা, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা আনোয়ার হোসেন, সদস্যসচিব হাফেজ মাহবুব আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন ও পাঁচকমলাপুর হাজী শামসুজ্জোহা জামি’য়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম শায়েখ আব্দুল কাদের সাহেব।
আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের আহ্বায়ক অ্যাড. আ.স.ম.আব্দুর রউফ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ হেদায়েত হোসেন আসলাম, সদস্যসচিব অ্যাড. মানজার আলী জোয়ার্দ্দার হেলাল, সদস্য অ্যাড. বদিউজ্জামান, অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন এরশাদ, এম এম শাহজাহান মুকুল, মসিউর রহমান পারভেজ প্রমুখ। দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাওলানা মুফতি নাফীউজ্জামান সাহেব। সহযোগিতায় ছিলেন হাফেজ ইনারুল ইসলাম ইন্না সাহেব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *