স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে মতবিনিময় ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অ:দা) জেসমিন আরা খাতুন।
মতবিনিময় সভায় ও সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হতে মাধ্যমিক বিভাগকে পৃথক করে আলাদা”মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা অঙ্গীভূত থাকার কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং ক্রমেই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে। তাই এটি আলাদা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।” ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন বলে পত্র পত্রিকার খবরে জানতে পেরেছি। কিন্তু অজানা কারণে তা আটকে আছে। সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার বিপরীতে পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪%। ফলে ৩২/৩৩ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি ছাড়াই অধিকাংশ শিক্ষক অবসরে যান। ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পূর্বের সমমর্যাদার অনেক পদকে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা প্রদান করে জনপ্রশাসনকে অধিকতর গতিশীল এবং জনসেবার মানোন্নয়ন করেছেন। ১৯৭৩ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, থানা শিক্ষা অফিসার সমগ্রেডের এবং পরস্পর বদলিযোগ্য পদ ছিল। উক্ত পদগুলোর মধ্যে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদ ছাড়া অন্য সকল পদ ইতোপূর্বে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
এমতাবস্থায় জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর কারণে সৃষ্ট ক্ষতি ও বৈতন বৈষম্য দূরীকরণের নিমিত্তে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে সহকারী শিক্ষক (৯ম গ্রেড), সিনিয়র সহকারী শিক্ষক (৬ষ্ঠ গ্রেড), সিনিয়র শিক্ষক (৫ম গ্রেড) ও প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষক (৪র্থ গ্রেড) ৪ (চার) স্তর বিশিষ্ট একটি যুগোপযোগী ও যৌক্তিক পদ সোপান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী। মাধ্যমিক শিক্ষা ক্যাডার চালু করে পদসোপান করা হলে বেতন বৈষম্য দূর হওয়ার পাশাপাশি পদোন্নতি জটিলতা কিছুটা হলেও দুর হতো, যা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় ধরে রাখার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকারি মাধ্যমিকে বর্তমানে শূন্যপদের তথ্য জানাগেছে- সিনিয়র শিক্ষক প্রায় ২৫০০টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রায় ২৫০টি, সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রায় ৫২৫টি, প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩০০টি, জেলা শিক্ষা অফিসার ৩৩টি, বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী পরিচালক ২০টি, উপ-পরিচালকের ১০ টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে। ৩২/৩৩ বছর চাকুরির পরও পদোন্নতিবিহীন অবসরে যাচ্ছেন শিক্ষকগণ। উক্ত পদগুলোতে পদোন্নতি প্রদান করা হলে সরকারের কোনো ব্যয় বৃদ্ধি পাবেনা। শিক্ষকদের পদোন্নতি সমস্যার সমাধানকল্পে এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২১ অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষক পদ থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর ৫০% পদে পদায়নের বিধান আছে। কিন্তু গত ৫ বছর পূর্বে উক্ত পদ সৃষ্টি হলেও এখনো পদায়ন দেওয়া হয়নি। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ হাজার শিক্ষক টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত রয়েছে। গত ৪ মে-২০২৫ আপিল বিভাগের রায় দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা আরো বলেন, আগামী ১০-কর্ম দিবসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে চাকুরী বিধি মেনে মানববন্ধন, মহাসমাবেশ আয়োজনসহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করা হবে।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভিক্টোরিয়া জুবলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী, সিনিয়র শিক্ষক রফিকুল ইসলাম লিটন, সিনিয়র শিক্ষক রহিমা খাতুন, সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক মজিবর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক মোমিনুল ইসলাম খান, সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সহকারি শিক্ষক বিএম আফসান আক্তার এ্যানী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক সাজিদ রহমান সেতু।