মেহেরপুরে দুটি মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

মেহেরপুর অফিস   

মেহেরপুরে ধর্ষণ মামলায় স্বপন আলীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছে মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সোমবার দুপুরে ট্রাইবুনালের বিচারক তৌহিদুল ইসলাম এ রায় দেন। জরিমানা অনাদায় আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারক। আসামি স্বপন আলী মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর কেলাপাড়া গ্রামের এনামুল হকের ছেলে। দন্ডাদেশের পর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

রায়ের আদেশ সূত্রে জানা যায়, আসামি স্বপন আলীর সাথে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রাহাতুল ইসলামের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ডেকে নেয়। ওই তারিখ সারাদিন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে রাতে আকুবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। সেখানে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে তার সাথে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় স্বপন আলী। পরদিন স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিজ পরিবারে ফেরত পাঠানো হয় ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ গাংনী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বপন আলী ও শাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে মেয়েটির পিতা রাহাতুল ইসলাম। পরে পুলিশ তদন্তে শাহারুল ইসলামের নাম বাদ দেওয়া হয়।

এ মামলায় ৮ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় স্বপনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। সাথে ২ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায় আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে, স্ত্রী হত্যা মামলায় আসামী সেন্টু (৪০)কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ এসএম নাসিম রেজা এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সাইদুর রাজ্জাক।

রায়ের আদেশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ জুন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আকুবপুরে মেয়ে সাগরিকা খাতুন আত্মহত্যা করেছে বলে মেহেরপুর গাংনী থানায় খবর দেন বাবা কুতুব উদ্দিন। মরদেহ জামাই সেন্টুর বাড়িতে রয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাংনী থানার এসআই শহিদুল ইসলাম মরদেহের সুরতহাল করে। মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য মরদেহ মেহেরপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়। মেয়ের বাবা ও কোন আত্মীয় স্বজন এজহার না করায় এস আই শহিদুল ইসলাম নিজেই বাদী হয়ে গাংনী থানায় ১৯ জুন ২০১৬ সালে অপমৃত্যু মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিয়মিত মামলা করে তৎকলীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আবু বক্করের উপর তদন্তের দ্বায়িত্বভার দেন। আবু বকর ময়না তদন্তের রিপোর্ট ও ৬জন সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে ২০১৭ সালের ২২ জুন বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। একই বছরের ২ আগস্ট বিজ্ঞ আদালত পেনাল কোড ৩০২/২০১ ধারায় চার্জশিট গ্রহণ করে বিচারকার্য শুরু করেন। মরদেহের সুরতহাল, ময়না তদন্তের রিপোর্ট ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে প্রমাণিত হয় স্ত্রী সাগরিকা খাতুন (২৫ )কে হত্যা করে স্বামী সেন্টু। ২০১৬ সালে ৬  জুন উক্ত হত্যাকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে সে। মামলায় সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই দন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. শহিদুল ইসলাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *