আব্দুর রহমান অনিক, দর্শনা
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম চিনিকল কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায়। চিনিকলের কেইন কেরিয়ারে আখ নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে মৌসুমের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
মাড়াই মৌসুমে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান।
চলতি মৌসুমে প্রায় ৭৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ দশমিক ৬০ রিকভারিতে ৪ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাড়াই কার্যক্রম চলবে প্রায় ৭২ দিন। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৫০ টন আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা রয়েছে মিলটির। মিলজোন এলাকায় এবার ৫ হাজার ৫৬২ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান জানান, উদ্বোধন উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাড়াই মৌসুমের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার আখ কাটার নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে, এতে অতিরিক্ত আখ সংগ্রহ সম্ভব হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি লোকসান কমানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা আশা করছি অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও মিলটি ভালোভাবে চলবে। আখচাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মরা পাতা মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আখ মিলে সরবরাহ করবেন।
চাষিদের স্বার্থে এবার ডিজিটাল পুর্জি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক উপায়ে সরাসরি আখচাষিদের মোবাইলে অর্থ পরিশোধ করা হবে।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৬২ কোটি টাকার লোকসানের বোঝা নিয়ে নতুন মৌসুম শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ চলতি মৌসুমে লোকসান উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, এ বছর মিলস হাউজের যন্ত্রপাতির ফিটিং অত্যন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এতে উৎপাদন বাড়বে বলে তারা মনে করছেন। সরকার চলতি মৌসুমে আখের দাম প্রতি মণ (৪০ কেজি) ২৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে আখচাষিরা আখের দাম আরও বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। চাষিরা নগদে পাওনা পরিশোধ, বীজ ও সার সময়মতো সরবরাহ, কোটা অনুযায়ী চিনি উত্তোলনের সময় বৃদ্ধি এবং আখের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের দাবিও জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরু এ্যান্ড কোম্পানি দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ডিস্টিলারি, জৈব সার, বাণিজ্যিক খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও ওষুধ কারখানাসহ একাধিক ইউনিট নিয়ে এটি একটি বৃহৎ শিল্প কমপ্লেক্স। দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানি চিনি কারখানা, জৈব সার কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও ডিস্টিলারি বিভাগ নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান। ডিস্টিলারি বিভাগে উৎপাদিত বাংলা মদ বোতলজাতকরণে সফল হওয়ার ফলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোষাগারে ১৪১ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে এবং প্রায় ১২০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। তবে আখের স্বল্পতার কারণে চিনি উৎপাদন বিভাগে লোকসান রয়ে গেছে।
চলতি মৌসুমে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিলস হাউজ আধুনিকায়ন করায় আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এলাকায় আখ চাষ কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে চলতি মৌসুমে চিনিকলের বড় অঙ্কের লোকসান উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এমন প্রত্যাশাই সংশ্লিষ্টদের।
দর্শনায় কেরু চিনিকলে মাড়াই মৌসুমের উদ্ধোধন আজ



