রকিবুজ্জামান/টিপু সুলতান, কেডিকে
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছে কৃষকরা। অল্প সময়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় এ চাষে ঝুকছে চাষিরা। বাজারে থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল বর্ষা কুইন ও বারী-৮ জাতের টমেটোর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। ৪ মাসের এ আবাদে খরচ বাদে কৃষকের বিঘা প্রতি লাভ থাকছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। উৎপাদন হচ্ছে প্রতি বিঘায় ১০০/১১০ মন।
জানা যায়, স্বপ্লমেয়াদে এই টমেটো চাষ হচ্ছে জীবননগর উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে। হাইব্রিড বর্ষা কুইন জাতের অধিক ফলনশীল এ টমেটো চাষ করছে কৃষকরা। গাছ রোপনের ৫০ থেকে ৬০ দিন মধ্যে টমেটো বিক্রি উপযোগী হয়। এই জাতের টমেটোর সাইজ বেশ বড় হয়। এ কারনে অন্য জাতের টমেটোর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করতে পারছে কৃষকরা। শীত এগিয়ে আসায় বাজারে টমেটোর চাহিদা বেড়ে গেছে। জুন-জুলাই মাসে গ্রীস্মকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটোর চারা রোপন করা হয়। রোপনের ২ মাস পর থেকে অর্থাৎ অক্টোবর মাস থেকে এটা বাজারজাত করা হয়। বর্তমানে বাজারে এ টমোটের পাশাপাশি শীতকালীন টমেটো উঠতে শুরু করেছে।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাড়ান্দী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, আমি প্রতিবছর হাইব্রিড টমেটো চাষ করে থাকি। এবার একবিঘা জমি চাষ করেছি। মাচা পদ্ধতি টমেটো চাষে করলে একদিকে যেমন ফলন বেশি পাওয়া যায়, অন্যদিকে টমেটো নষ্ট হয় না বললেই চলে। মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে সহজে কীটনাশক, সার ও সেচ দেয়া যায়। টমেটো উত্তোলন, বাগানের মধ্যে চলাফেরা ও পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। এক বিঘা চাষ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে টাকা ঘরে তুলেছি প্রায় ২ লাখ টাকা। বর্তমানে জমিতে যে পরিমানে টমেটো আছে সেটা বিক্রি করেও আরো লাখ টাকা পাবো বলে আশা করছি।
আরেক চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, মাচা পদ্ধতিতে ৩ বিঘা জমিতে থাইল্যান্ড হাইব্রিড বর্ষা কুইন টমেটো চাষ করেছি। বাজারে বর্ষা কুইন টমেটো প্রতি কেজি ১০০-১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে। তিন বিঘা জমি চাষে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। এ পযর্ন্ত বিক্রি করেছি ৫ লাখ টাকা। মাঠে যে পরিমানে টমেটো আছে সেটা বিক্রি করলে ৪ লাখ টাকা হবে। তিনি আরো বলেন, জুন মাসে হাইব্রিড বর্ষা কুইন টমেটো বীজ সংগ্রহ করি। এরপর পাতু দিয়। পাতু দেওয়ার ২০/২৫ দিনের মধ্যে বেডে চারা লাগানোর উপযোগী হয়। এবার আমি টমেটোর চারা বিক্রি করেও ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি।
টমেটো চাষি আশরাফুল জানান, আমি বর্ষা কুইন টমেটো চাষ করেছি দেড় বিঘা জমিতে। দেড় বিঘা আবাদে চারা লেগেছে সাড়ে ৪ হাজার পিচ। এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। ১বিঘায় ১২০ মন টমেটো পাওয়া যাবে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাভেল রানা বলেন, উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন বর্ষা কুইন টমেটো চাষ হয়েছে। এ জাতের টমেটো অধিক ফলনশীল হওয়ায় কৃষকরা বেশি দরে বিক্রি করতে পারছে। এতে তারা লাভবান হচ্ছে। আগামীতে যাতে আরো বেশি জমিতে বর্ষা কুইন জাতের টমেটো চাষ করতে পারে তার জন্য ট্রেনিং ব্যবস্থা করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে জীবননগরে টমেটোসহ বিভিন্ন ফল আবাদ বেশি হয়। এবার ৩২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বর্ষা কুইন ও বারী-৮ জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। জুন-জুলাই এ জাতের টমেটো রোপনের উপযুক্ত সময়। এ আবাদে যেমন খরচ বেশি হয়, লাভের পরিমানটাও অনেক বেশি থাকে। বিঘাপ্রতি ফলন হয় ১১০/১১৫ মন। এছাড়াও চলতি মৌসুমে শীতকালীন টমেটো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ হাজার ১ শ বিঘা জমিতে।



