স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম, চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। সভার শুরুতে সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে নবাগত জেলা প্রশাসকের পরিচয় পর্ব শেষে গত মাসের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন সহকারী কমিশনার এস.এম আব্দুর রউফ শিবলু।
সভায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। জেলার অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়কগুলোতে সড়কবাতি লাগানো ও সদর হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক অগ্রগতি তুলে ধরে ভবিষ্যতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপের পরামর্শ দেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আমি ভেবেছিলাম ছোট জেলা হিসেবে সমন্বয় কমিটির সভায় খুব কম মানুষ হবে, তবে এত উপস্থিতি দেখে আমি মুগ্ধ। আশা করছি সকলে মিলে চুয়াডাঙ্গা জেলাকে এক নতুন রূপ দিতে সক্ষম হবো। আজ এই সভায় নানা ব্যাস্ততার কারনে বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারের পরিবর্তে তাদের প্রতিনিধি এসেছেন। আজকে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দকে মেসেজটি পৌছে দেবেন, ‘জেলা সমন্বয় কমিটির সভাটা জেলার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে সবাই দেখতে চায়, কারণ আপনার ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে আপনি যেভাবে দ্বায়িত্ব নিয়ে কথা বলবেন, আপনার প্রতিনিধিত্ব যিনি করতে এসেছেন তিনি তো ঐ ভাবে কথা বলতে পারবেন না। তাই পরবর্তীতে স্ব স্ব দপ্তরের প্রধানদের উপস্থিতি কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমার চুয়াডাঙ্গায় আসার প্রথম দিনেই একটি অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। জীবননগরে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ডাকাতি করা হয়েছে। রাস্তায় পুলিশের গাড়ি টহল দেই ঠিকই, তবে ডাকাতদের ডাকাতি করতে সময় লাগে অল্প কিছুক্ষণ। অন্ধকার মানেই ক্রাইম জোন। তাই সড়ক গুলোতে আলোর ব্যাবস্থা থাকলে এমন দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
তিনি পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ১৫ দিনের ভিতর সড়ক পরিচ্ছন্নতা এবং সড়কে সড়কবাতির ব্যাবস্থা করতে হবে। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের পূর্বে আমাদের প্রস্তুুতি নিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পুর্বে কিছু ডিপার্টমেন্ট কাজ শুরু করে দিয়েছে, বাকি ডিপার্টমেন্ট গুলো তফসিল ঘোষনার পর কাজ শুরু করবে। এবারের নির্বাচন সুন্দর সুষ্ঠ ভাবে করা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। বিগত দিনের নির্বাচনগুলো বিতর্কিত থাকায় জনগনের আমাদের ওপর একটু বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তাই অতিতের ভুল ভ্রান্তি সুধরিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এবার নির্বাচনে কাজ করতে হবে আমাদের।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন আরো বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যেন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ আমি অসুস্থ হলেও এই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে যাব। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তার জন্য প্রয়োজনে পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গার সরকারি কোয়ার্টারগুলো খুব দ্রুতই মেরামত করতে হবে। যাতে সেখানে বসবাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকদের তামাক চাষে নীরুৎসাহিত করতে হবে। আর যারা তামাক চাষ করবে তাদের কোনরকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না। চুয়াডাঙ্গা জেলার যেখানেই পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে সেখানেই পরিবেশ অধিদপ্তরের পদার্পণ হতে হবে। এ সময় চুয়াডাঙ্গা শহরের কবরী রোডের মেরামতের জন্য তাগিদ দেন তিনি। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কবরী রোডের বসে যাওয়া স্লাবটি এক দিনের মধ্যে মেরামতের প্রতিশ্রুতি দেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সুজাত কাজী জানান, চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ওভারপাসের নিচের সার্ভিস লেন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ওভারপাস নির্মাণে রেলওয়ের কিছু জায়গা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের জনসচেতনতা মূলক উঠান বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ১হাজার ২শ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়ে থাকে। এই তামাক চাষের ফলে মাটি তার উর্বরতা হারায়। তাই সকল কৃষকদেরকে তামাক চাষে নীরুৎসাহিত করা হবে।
সভায় উপস্থিত থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জামাল আল নাসের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন, সহকারী কমিশনার এস.এম.আশিস মোমতাজ, সহকারী কমিশনার আলাউদ্দিন আল আজাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আওলিয়ার রহমান, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস, জেলা তথ্য অফিসার শিল্পী মন্ডল, জেলা শিক্ষা অফিসার জেসমিন আরা খাতুন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল, জেলা সঞ্চয় অফিসার নজরুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সজীব পাল, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, মাথাভাঙ্গার পত্রিকার সম্পাদক সরদার আল আমিন, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন



