স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ।
উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে উপস্থিত সকলের মাঝে মুক্ত আলোচনা করা হয়। এ সময় খাদ্যে ভেজাল রোধ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বাল্যবিবাহ রোধ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় জানানো হয়, গত অক্টোবর মাসে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ২টি, চুরি ৩টি এবং অন্যান্য ২৮টি মামলাসহ মোট ৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে দর্শনা থানায় একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ২টি, চুরি ৩টি ও অন্যান্য ১২টি মামলাসহ মোট ১৭টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার পাশাপাশি খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে পুলিশি টহল বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বাল্যবিয়ে রোধে সদর ও দর্শনা থানার ওসিদের বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
সভায় অক্টোবর মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৬টি উঠান বৈঠকে বাল্যবিয়ে, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক আলোচনা করেছেন। একই মাসে আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৬টি উঠান বৈঠকে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম ৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। এতে ২১টি মাদক মামলা দায়ের ও ২২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ২ হাজার ৩২৫ পিস ইয়াবা, ৪২০ পিস ট্যাপেন্টাডল, ৩ লিটার দেশি মদ, ৭৫০ মিলিলিটার হুইস্কি, ২৮৫ গ্রাম গাঁজা ও ৪৪৪০ মিলিলিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করা হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল রোধে ফল, শাকসবজি ও মাছে কার্বাইড, ফরমালিন বা অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিংড়িতে জেলি পুশ বন্ধেও বিশেষ নজরদারি চালানোর আহ্বান জানানো হয়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার এবং এর কুফল সম্পর্কে ধর্মীয় ও সামাজিক প্রচারণা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এ বিষয়ে অক্টোবর মাসে উপজেলার ৩২৬টি মসজিদের ইমামগণ জুম্মার খুতবায় সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে সভায় জানানো হয়।
এ সময় চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে চোরের উৎপাত বেশ বেড়েছে। চোরের উৎপাত কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল প্রয়োজন। খাদ্যে ভেজাল রোধ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত যে অভিযান পরিচালিত হয়, তা জনসাধারণ জানতে পারেনা। অভিযানের সময় যদি গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে নেওয়া যায় তাহলে জনগণ এ সকল অভিযান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং সচেতন হবে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ ও সাধারণ জনগণের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ বলেন, এত উঠান বৈঠক ও প্রচার-প্রচারণা চালানোর পরেও বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের অনিয়ম ও অপরাধ রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব আছে। আমরা যদি সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হই, তাহলে সমাজ থেকে মাদক, চুরি বা বাল্যবিয়ের মতো অপরাধ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আরোও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, সমাজসেবা কর্মকর্তা মৌমিতা পারভীন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীমা সুলতান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহাজালাল খানসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা।



