চুয়াডাঙ্গার বেলগাছিতে সিনজেন্টার ফুলকপি বীজ কিনে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতির মামলার শুনানী, শর্ত সাপেক্ষে ৭ আসামীর জামিন

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামে সিনজেন্টা কোম্পানাীর হোয়াইট গোল্ড জাতের ফুলকপি বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের দায়ের করা মামলার শুনানী হয়েছে। গত বুধবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত চুয়াডাঙ্গায় জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আগামী ২৮ ডিসেম্বর/২০২৫ তারিখের এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে আপোষ করে নেওয়ার শর্তে ৭ আসামীকে জামিন দেয়া হয়।

                জানা গেছে, গত বছর বেলগাছি গ্রামের অর্ধশত কৃষক আগাম ফুলকপি আবাদ করেন। তারা সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানীর যিরঃব এড়ষফ জাতের ফুলকপির বীজ ক্রয় করেন। পরে কৃষকরা বেলগাছি গ্রামের মাঠে রোপন করেন। ফুলকপি গাছ রোপনের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তাতে কোন ফল আসেনি এবং গাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়ে। এতে কৃষকরা হতাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় তারা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ ক্ষতি পুরণের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করে, ফুলকপির বীজ নিন্মমানের বলে রিপোর্ট দাখিল করেন। তাতেও সিনজেনটা কোম্পানী কৃষকদের ক্ষতিপুরণ না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে।

                কৃষকদের পক্ষে বেলগাছি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মন্ডলের ছেলে মোঃ আলাউদ্দীন আলী (৬৪) বাদী হয়ে আমলী আদালত চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। চলতি ২০২৫ সালের ২৭ জানুয়ারী এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হেদায়েত উল্লা (৬০), সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিঃ, গউঙ ঠবম. ংববফং মোঃ আল আমিন (৩০), সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিঃ বীজ সেক্টরের প্রধান মোঃ হাবিবুল্লা (৫০), উরংঃৎরনঁঃড়ৎ মোঃ বাচ্চু মিয়া (৫৫), জবঃধরষবৎ মঞ্জুরুল ইসলাম সোনা (৩৫),  জবঃধরষবৎ লাল্টু (৪০) ও জবঃধরষবৎ মোঃ জমির আলী (৫৫)। এছাড়াও মামলার সাক্ষী করা হয়েছে বেলগাছি গ্রামের ১৮ কৃষককে। মামলায় বলা হয়েছে নিম্নমানের ফুলকফির বীজ প্রদান করায় বাদী এবং সাক্ষীগন সর্বমোট ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির স্বীকার হন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে,  সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিঃ একটি আন্তজার্তিক মানের অমৎড় নধংবফ ংববফ পড়সঢ়ধহু যাহার সুনামের সুবিধা লইয়া আসামীগন পরস্পর যোগসাজস করিয়া বাদীসহ সাক্ষীগনকে প্রতারনা করিবার অভিপ্রায়ে তাহাদের কোম্পানির যিরঃব এড়ষফ ফুলকফির বীজ রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে গম্বুজ আকৃতির খুব শক্ত ও ধবধবে সাদা ১ থেকে ১.২৫ কেজি ওজনের পাতাগুলো ঘন, শক্ত পরিবহনে উপযোগী ফুলকপি উৎপন্ন হইবে মর্মে বাদীসহ সাক্ষীগনকে আশ্বস্ত করে। যাহাতে আশ্বস্ত হইয়া বাদী ও সাক্ষীগণ একত্রে ৩২ বিঘা জমির জন্য মোট ৯০ হাজার ৩শ টাকার বীজ  আসামী বাচ্চু মিয়া (উরংঃৎরঃঁঃড়ৎ) এর মাধ্যমে মঞ্জুরুল ইসলাম সোনা, লাল্টু ও মোঃ জমির আলীর নিকট থেকে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে খরিদ করিয়া জমিতে রোপন করিয়া সার পানি কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় উপকরন আসামীগনের নিদের্শনা মোতাবেক প্রদান করিয়া ৬ মাস যাবত চাষাবাদ করেন। কিন্তু সুগঠিত গাছ বা ফুল ফল উৎপাদন করিতে ব্যর্থ হন। আসামীগন তাহাদের প্রতিশ্রুত মানের যিরঃব এড়ষফ ফুলকফির বীজ প্রদান না করিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি সাধনে উদ্দেশ্যে নিম্নমানের ফুলকফির বীজ প্রদান করায় বাদী এবং সাক্ষীগন সর্বমোট ৪০ লাখ  টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হন। এই বিষয়ে আপোষের জন্য বসার এক পর্যায়ে ঘটনার তারিখ, সময়ে ও স্থানে বাদী এবং সাক্ষীগন আসামীগনের নিকট তাহাদের ক্ষতিপূরন দাবী করিলে আসামীগন বলে যে, কোন ক্ষতিপূরন দিব না। বাড়াবাড়ী করলে খুন জখম করে ছাড়ব। আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারনা মূলে নিম্নমানের ফুলকফি বীজ সংগ্রহ করে। বাদী ও সাক্ষীগনের মোট ৪০ লাখার টাকার ক্ষতি সাধন করিয়াছে। বিষয়ে বাদীসহ সাক্ষীগন ডিডি অফিস, খামার বাড়ী চুয়াডাঙ্গা, বীজ প্রত্যায়ন অফিস চুয়াডাঙ্গা, উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা ও জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গাকে লিখিত ভাবে অবগত করেন। এই সাক্ষীগন ঘটনা জানে।

                এদিকে গত বুধবার আমলী আদালত চুয়াডাঙ্গায় জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে আসামীরা আদালতে হাজির হলে আদালত শুনানি শেষে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের  ভিতরে আপোষ করে নেওয়ার পড়হফরঃরড়হ দিয়ে ধফ-রহঃবৎরস জামিন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *