চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে নানা আয়োজনে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার

“সাম্য ও সমতায় দেশ গড়বে সমবায়” এ প্রতিপাদ্যে চুয়াডাঙ্গায় ও মেহেরপুরে ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হয়েছে। সমবায় দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চুয়াডাঙ্গা সমবায় অফিসের কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের কোর্ট মোড় ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

পরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ ইশতিয়াক মাহমুদ রাফি।

পৌর কলেজের শিক্ষিকা আয়েশা আক্তার রিতার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন  জেলা সমবায় কর্মকর্তা কাজী বাবুল হোসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ লক্ষ ৮২ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে। এ সকল সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৫৮ জন। সমবায়ীদের মূলধনের পরিমাণ ২ হাজার ৭৭৬ কোটি ১ লক্ষ টাকা। চলতি বছর সমবায় সমিতি থেকে ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ১ হাজার ৬৩০ টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি রয়েছে। এ সকল সমিতিতে ৬৪ হাজার ২৯০ জন ব্যক্তি সদস্য রয়েছেন যাদের সংগৃহীত মূলধন ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯০৪ সাল থেকে সমবায় প্রকল্প আইন চালু হয়। এর আগেও অন্য ফরমেটে মানুষ কাজ করত, এই প্রকল্পটা আগে অনেক ভালো চলেছে। আমরা আগে গ্রামে দেখেছি প্রতি সপ্তাহে ১০ টাকা করে জমা রাখত, তারপর কারো কোন বিপদ হলে সন্ধ্যাবেলা সমিতির লোকজন এক জায়গায় বসে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কে টাকাটা দিত। তখনকার মানুষ সমিতির টাকা মেরে দিবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে দিবে না এরকম কোন ধ্যান ধারণা তাদের মধ্যে ছিল না। সমিতির টাকা নিয়ে যে দিবে না, এটা তাদের কল্পনার মধ্যেও ছিল না, যার কারণে সমিতিগুলো খুব ভালো চলতো। তারপর আস্তে আস্তে মানুষের রূপ পাল্টানো শুরু হয়েছে, অনেক বুদ্ধিমান মানুষ এই সমিতিতে সংযুক্ত হয়েছে, তারা এমনই বুদ্ধিমান তাদের নিয়তই থাকে সমিতির টাকা নিয়ে না দেওয়ার ইচ্ছা। এ সমস্ত বিষয়ে সমিতিগুলো ক্ষেত্র বিশেষ আতঙ্ক হয়ে পড়েছে সমিতির সদস্যদের কাছে।

তিনি আরো বলেন, এখন যে সমিতি গুলা দেখা যাচ্ছে সেই সমিতি গুলা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণীত, যেমন মৎস্যজীবী সমিতি গুলো কিভাবে বিল, বাওর, পুকুর ইজারা নিতে পারবে। আজকে যদি ইজারা না দিত তাহলে একটা সমিতিও থাকতো না। মানুষের জীবনে চলতে হলে কিছু টাকা পয়সা লাগতেই পারে, কারণ মানুষের সমস্যা তো আর বলে কয়ে আসেনা। হঠাৎ করে আপনার এক লাখ দুই লাখ টাকা লাগতেই পারে। এই টাকাটা কোথায় পাবো তখন সে বাধ্য হয় কোন এনজিওর কাছ থেকে টাকাটা নেওয়ার জন্য। এই টাকাটা শোধ করার জন্য দেখা যাচ্ছে আরো ছোটখাটো এনজিও থেকে লোন নেই যার কারণে সে একটা চক্রের মধ্যে পড়ে যায়। দেখা যায় তার মাসিক ইনকাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, কিন্তু তারা কিস্তি দিতে হয় ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা, এখন সে চলবে কিভাবে? যার কারণে আর্থিক সমস্যায় থাকলে যে সমস্যা গুলো দেখা যায় মেজাজ খিটখিটে, ঘরে অশান্তি মারামারি পরে ঝামেলায় পড়তে হয়।

এই সমিতি যেগুলোর পিছনে সরকার অনেক ইনভেস্ট করে। এমন কি একটা সমবায় ডিপার্টমেন্টও খুলে রেখেছে আপনাদেরকে দেখাশোনা করার জন্য। জেলা পর্যায়ে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন দিয়ে কর্মকর্তা রাখে নিয়মিত অডিট করায় বিভিন্ন দপ্তর এখন লোন দিয়ে থাকে। তাতেও কোন লাভ নাই যদি আমাদের নিয়ত না ঠিক থাকে। নিয়ত যদি ঠিক রাখা যায় তাহলে আমার বিশ্বাস এই সমবায়ের মধ্য দিয়ে আপনার ভাগ্য আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহাবুব উল ইসলাম বলেন, আমরা দেখি সকলে নিজেদের প্রয়োজন থেকেই সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত হন। ইতোপূর্বে দেখা যেত, কৃষকেরা জমি চাষ করার পূর্বে অর্থের প্রয়োজনে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিত। পরে সেই ঋণ সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে চাষযোগ্য জমিটি হারাতো। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মানুষ নিজের তাগিদে, নিজের প্রয়োজনে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যেই সমবায় সমিতি গঠন করে। এই সমবায় সমিতির ফলেই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার বিকাশ ঘটেছে।

সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সমবায়ী আব্দুল আলিম ও মোক্তার হোসেন। পরে ৬ জন সুবিধাভোগী নারী ও পুরুষের মাঝে লোনের চেক এবং ৫ জন সমিতির সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

জীবননগর অফিস জানিয়েছে,  দিবসটি পালন উপলক্ষে জীবননগর উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় বিভাগের উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সেখান থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালিটি জীবননগর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ শেষে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে জীবননগর উপজেলার অডিটোরিয়াম রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জীবননগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা। জীবননগর সমবায় কর্মকর্তা নূর আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জীবননগর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল মাজেদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান, শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাভেল রানা, আনছার ভিডিপির কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সহ অনেকে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন সমবায় ও ঋণদান সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায়-৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে র‌্যলি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় বিভাগের যৌথ আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয়। পরে র‌্যলি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা সমবায় অফিসার হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডাঃমশিউর রহমান, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা লীলিমা আক্তার হ্যাপী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দামুড়হুদা প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুজোহা পলাশ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান, উপজেলা ইউসিসিএ চেয়ারম্যান মহসীন আলী শাহ পিন্টু, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, হাউলী ইউপির(ভারপ্রাপ্ত)চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো- অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক গিয়াস উদ্দিনসহ উপজেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক ও উদ্যোক্তাবৃন্দ।

আলোচনা সভায় বক্তারা সমবায় সমিতির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, “দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!” শিল্প বিপ্লবের সময় যখন কৃষি ব্যবস্থায় ধ্বস নেমেছিলেন তখন থেকেই সমবায়ের ধারণা শুরু হয়। সমবায়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যুগে যুগে মানুষ  আর্থিক সংকট কাটিয়ে মুক্তি লাভ করে নিজেকে প্রতিষ্টিত করার সুযোগ পেয়েছে।কোন ব্যাক্তি কিংবা সংগঠন  সমবায়ের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে আর্থিক ও সামাজিক মুক্তি লাভের জন্য কাজের উদ্যোগ নিয়ে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে কাজ করবেন আশা করি সফলতা মিলবেন। অনুষ্ঠানে  উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতিদের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিশেষ ও অন্যান্য শ্রেনী ক্যাটাগরিতে ভরশা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ, ব্যবসায় ক্যাটাগরিতে একতা হেয়ার প্রসেসিং,ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ, সঞ্চয় ও ঋণদান/ ক্রেডিট সমবায় ক্যাটাগরীত হরিরামপুর সেবা ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ,উৎপাদনমূখী সমবায় ক্যাটাগরীতে দলকা মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ পুরস্কার ও ক্রেস্ট লাভ করে।

আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, গতকাল  শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় ও সমবায়ের পতাকা উত্তোলন করে বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং পরিষদের হল রুমে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপজেলা সমবায় অফিসার মমতা বানুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম। সমবায়ই পারে গ্রামীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাখছুরা জান্নাত, উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা মাসুদ কামাল। বিআরডিবি চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন মাস্টারে উপস্থাপনায় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় তন্তবায় সমবায় শিল্প সমিতির সভাপতি মহি উদ্দিন, সদস্য গোলাম মোস্তফা, মেহেদি হাসান ডাবলু, আনিসুর আলী, বিশ্বাস সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি রানা আহমেদ লাবলু, দুর্গাপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির রাজিয়া খাতুন, ভাংবাড়িয়া  পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির মজিরুল ইসলাম, অন্যান্য সমিতির সভাপতি সম্পাদকের মধ্যে শামিমা খাতুন, আকলাকুর রহমান, আশিকুর রহমান, উপজেলা সমবায় অফিসের সহকারি পরিদর্শক সাহারুল ইসলাম, সরদার মাসুদ রানা, অফিস সহকারি হাসেম আলী, ইকবাল উপজেলা বিভিন্ন সমিতির সদস্যরা।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, “সাম্য ও সমতায় দেশ গড়বে সমবায়” প্রতিপাদ্যে মেহেরপুরের গাংনীতে পালিত হয়েছে ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে শেষ হয়। পরে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা সমবায় অফিসার আবু হাসেমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি মেহেরপুর জেলা  মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম সোনা। এসময় অন্যেদের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন, চাঁদপুর সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, গাংনী উপজেলা বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক আব্দাল হক, ডিজিটাল বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি তোফায়েল হোসেন প্রমুখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *