ধর্ষণ মামলার আসামি আলাউদ্দিন জামিনে মুক্ত হয়ে বাদিনীকে দিচ্ছে হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি!

স্টাফ রিপোর্টার

ধর্ষণ মামলার আসামি আলমডাঙ্গার খাসবাগুন্দ গ্রামের আলাউদ্দিন জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার বাদিনীকে মামলা তুলে নেওয়ার  হুমকি দিচ্ছে। এদিকে ন্যায় বিচারের আসায় লিখিত অভিযোগ করে কিঁশোরী মাতা পেতে চাই স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানকে পাইয়ে দিতে চাই পিতৃ পরিচয়।

এ বিষয়ে ধর্ষণের শিকার কিশোরী মাতা লিখিত অভিযোগে বলেন,”চুয়াডাঙ্গার, ধর্ষক আলাউদ্দিন ৯ মাস জেল খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে,  আমাকে (বাদিনীকে) মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। প্রাণনাশের ভয়ে শিশু সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমি। ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হওয়া সত্বেও ৭ মাস বয়সী শিশু ফারজানা পায়নি পিতৃ পরিচয় এবং  আমাকে দেয়নি স্ত্রীর স্বীকৃতি!। এ অবস্থায় আমি  আসামি আলাউদ্দীনের জামিন বাতিলসহ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও আমি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাই।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, বাদিনীর দরিদ্র পিতা (খেদের আলী) সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে সাংসারিক অভাব-অনটনের কারনে তার স্ত্রীর  তার মেয়েকে ঢাকার মিরপুর মডেল থানাধীন এক নিকট আত্নীয়ের বাসায় কাজের জন্য পাঠান। এদিকে আত্মীয়তার  সুবাদে আলাউদ্দিন নিয়মিত মিরপুরের ওই বাসায় আসা যাওয়া এবং রাত্রি যাপন করতেন। বাসার গৃহকর্তা ও গৃহকর্তী স্বামী-স্ত্রী দু-জন ঢাকায় চাকরি করেন। তারা তাদের দুই সন্তানকে স্কুলে দিয়ে, বাদিনী কে বাসায় একা রেখে কর্মস্থলে চলে যান। প্রতিদিনের ন্যায় ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ৮ টার সময় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী দুই বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে বাদীনিকে বাসায়  রেখে কর্মক্ষেত্রে চলে যান।

সে সময় আলাউদ্দিন বাসায় প্রবেশ করেন। তখন বাদীনি বারান্দায় বসে ছিলো। এ সময় আসামী তাকে কাজের কথা বলে, ঘরের ভেতর ডেকে নিয়ে এসে বলে, তিনি প্রবাস থেকে এসেছেন এবং সম্প্রতি আবার বিদেশে যাবেন। যাওয়ার সময় তিনি তাকে (বাদীনিকে) তার সঙ্গে নিয়ে যেতে আগ্রহী। এর আগে আলাউদ্দিন তাকে জমি-সম্পত্তি লিখে দিয়ে, বিয়ে করার প্রলোভন দিয়ে  মেলা-মেশার কু-প্রস্তাব দেয়। বাদিনী ওই অশালীন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, আলাউদ্দিন বাদীনির গলায় ছুরি ধরে, ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এবং তার পরনের সেলোয়ার কামিজ টেনে-হিচরে খুলে, জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

এর পর থেকে উক্ত আলাউদ্দিন গৃহকর্তা, গৃহিণী ও বাচ্চাদের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে ওই বাসার প্রবেশ করতেন। নারী লোভী আলাউদ্দিন বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে  এবং নেশা জাতীয় ঔষধ খাইয়ে, বার বার ধর্ষণ করতে থাকেন। এ বিষয়ে আলাউদ্দিন বাদীনিকে ভীতিপ্রদর্শন করে বলেন, এসব ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করলে, তিনি তাকে প্রাণে মেরে ফেলবেন এবং আপত্তিকার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। আলাউদ্দিনের বিভিন্ন  হুমকির কারণে অসহায় কিশোরী, বিস্তারিত ঘটনা করো কাছে প্রকাশ করার সাহস পাইনি।

এভাবে আসামি আলাউদ্দিন সর্বশেষ গত ৮ মে-২০২৪, বেলা আনুমানিক ১১ টার সময় বাসার মালিকের অনুপস্থিতে, বাদিনীকে শয়ন কক্ষে উপর্যুপরি ধর্ষণ করার পর বাদীনি অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। তার  শারীরিক অসঙ্গতি দেখে গৃহকর্তী তাকে মেডিকেল চেকআপ করান। চেকআপ শেষে বাদীনি ৪মাসের  অন্তঃসত্তা বলে জানান চিকিৎসক।   তখন বাদীনি বাধ্য হয়ে  আলাউদ্দিনের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে এসব কথা বাসায় ও তার পরিবারের সবাইকে জানালে আলাউদ্দিন গাঁঢাকা দেন। এ পরিস্থিতিতে বাদীনি গৃহকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ এবং  সহযোগিতায়  বাদী হয়ে ৯ জুন-২০২৪ তারিখে, ঢাকাস্থ মিরপুর মডেল থানায়,  ধারা: ৯(১) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০  মামলা দায়ের করেন।

বাদিনির অভিযোগের ভিত্তিতে অফিসার ইনচার্জ এস.আই কানিজ ফাতেমা উক্ত মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। গত ৯ ডিসেম্বর-২০২৪ তারিখে বাদীনির গর্ভে শিশু ফারজানার জন্ম হয়।

মামলা হওয়ার পর আসামী দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস সময় গাঁঢাকা দিয়ে থাকে এবং সুযোগ বুঝে চোরাই পথে বিদেশে চলে যান। কিন্তু তার কাঙ্খিত দেশে পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হোন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর-২০২৪ তারিখে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন পুলিশ আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

অতঃপর আদালত মামলার আসামি ও ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ প্রদান করেন। পরীক্ষক নির্ধারিত সময়ে দীপঙ্কর দত্ত ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করেন। প্রাপ্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ডিএনএ পরীক্ষায়, সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণীত হয় যে, মোঃ আলাউদ্দীন  বাদীনির গর্ভজাত সন্তান ফারজানা’র জৈবিক পিতা। সুত্র: ফরেনসিক ডিএনএ লেবরোটারি অব বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি কার্যালয়ের।  ২৩ জানুয়ারি-২০২৫, মেমো নং- ২৪-০৩৮১৪/১।

আসামি আলাউদ্দিন দীর্ঘ ০৯ মাস জেল হাজতে আটক থাকার পর, সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে লাভ করেন। মামলার বাদিনী ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে, মামলার আসামি আলাউদ্দিন বাদীনির পথরোধ করে এই বলে হুমকি দেন যে, রায়ের আগেই মামলা তুলে নিবি। তা না হলে তুই ও তোর বাচ্চাকে হত্যা করে আমি বিদেশে চলে যাব।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে কায়দা করে ফাঁসানো হয়েছে। আমি যাতে বিদেশ না যেতে পারি সেজন্য আমাকে নানাভাবে মামলা দিয়ে ফাঁদে ফেলানো হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *