স্টাফ রিপোর্টার
আসন্ন দুর্গাপূজা ২০২৫ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
সবার কার্যবিবরণীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যাপী ১১২টি মন্ডপে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫টি, দামুড়হুদা উপজেলা ২১টি, জীবননগর উপজেলায় ২৫টি এবং সদর উপজেলায় ৩১টি মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। তিনি আরো বলেন, সহজে যোগাযোগ করা যায় এমন স্থানে পূজামন্ডপ স্থাপন করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সর্বদা টহল মোতায়ন থাকবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে হবে। আজান ও নামাজের সময় ঢাক ঢোল ও শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বাজানো যাবে না। পূজা মণ্ডপের প্রবেশদ্বার বা রাস্তায় কোনো রকম দোকানপাট বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় যথেষ্ট আলোকসজ্জা করতে হবে। এ সময় সভায় শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও আলোকসজ্জা, মণ্ডপ ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, জেলা পুলিশের শতকরা ৮০ ভাগ জনবল দূর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। প্রায় ৭৯০ জন ফোর্স জেলাব্যাপী কয়েকটি স্তরে মোতায়েন থাকবে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১১২ টি পূজা মন্ডপ গুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ এই তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ টি মন্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৪১টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫৩টি মণ্ডপকে সাধারন হিসেবে ধরা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তরে যে মণ্ডপগুলোকে ধরা হয়েছে সেগুলোতে স্থায়ীভাবে দুইজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ স্তরের আওতায় মন্ডপগুলোতে একটি করে পুলিশ সদস্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবে। পূজা মন্ডপ গুলোর সকল তথ্য আদান-প্রদানে একটি মোবাইল দ্বারা তিনটি মণ্ডপ কভার করতে সক্ষম, জেলাব্যাপী এমন মোট ৩৮টি মোবাইল দেওয়া থাকবে। বড় যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৫ টি স্ট্রাইকিং থাকবে। পূজা মন্ডপে যে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বাহিনীর সাথে সিভিল পোশাকে ডিএসবি ও আনসার সদস্যরা সহায়তা করবে। রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সকলকে পালাক্রমে মন্দির পাহারা দিতে হবে। সকলের সচেতনতায় সুন্দর হয়ে উঠবে এই উৎসব।
চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক নাজমুল হাসান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সর্বদাই তৎপর থাকবে বিজিবি। সবার আগে আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হল আত্মসচেতনতা। দুর্গাপূজা কমিটির সদস্য যারা আছেন সকলেই যদি ব্যক্তিগতভাবে সচেতন থাকেন তাহলে যে কোন অনাকাক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দূর্গাপূজার সময় পাসপোর্ট বিহীন সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়া থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা আর্মি ক্যাম্পের অধিনায়ক ফাহাদ আহমেদ আবির বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে আজকে যে আলোচনা সভা করা হচ্ছে যদি তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সবকিছুই নিরর্থক হয়ে যাবে। সকল কিছু কাগজে-কলমে না থেকে বাস্তবায়িত হওয়াটাই বেশি জরুরী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদাই মোতায়ন থাকবে। যে কোনো ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী কে জানাতে হবে। দুর্গাপূজার সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে সেনাবাহিনী পূজামন্ডপ গুলো পরিদর্শন করবেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সুষ্ঠুভাবেই শারদীয় দুর্গোৎসব। কোন দুষ্কৃতিকারী যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যে প্রশাসন সতর্কতা মূলক অবস্থানে থাকবে। বিসর্জনের সময় সকলকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। মন্ডপে যে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে সকলকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, আনসার ব্যাটেলিয়নের জেলা কমান্ড্যান্ট ফারুক ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, ডাঃ মার্টিন হীরক চৌধুরী , চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, আলমডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অমল বিশ্বাস, দামুড়হুদা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শোভন দাস, জীবননগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জীবন সেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সভাপতি হেমন্ত সেন প্রমুখ।
প্রস্তুতি সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, মহেশপুর ৫৮ বিজিবির সরকারী অধিনায়ক সিহানুক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশিদ, এনএসআই উপপরিচালক শামসুল হক, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ, সহকারী কমিশনার আশফাকুর রহমান ও জেলার বিভিন্ন মন্দির কমিটির সদস্যবৃন্দ।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত
