বড় বাজার হাসান চত্বর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের পাশেই নির্মাণ হবে জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ, চুয়াডাঙ্গায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের উপযুক্ত স্থান নির্বাচন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতিতে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের লক্ষ্যে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের  কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হবে। আগামী ৫ই আগস্ট এর মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে তাই চুয়াডাঙ্গা শহর কেন্দ্রিক দ্রুত একটি স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন। তিনি ইতোপূর্বের নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের পাশে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য দুটি জায়গার প্রস্তাব পেশ করেন। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের হাসান চত্বর সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের পাশে পরিত্যক্ত জমিতে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। আগামী ৫ আগষ্ট স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের স্বরনে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হবে। এ সময় জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের থ্রিডি ইমেজ প্রজেক্টর এর মাধ্যমে দেখানো হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মহসীন। তিনি বলেন জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে ১৬০০ বর্গফুট জমির প্রয়োজন। এটি কংক্রিটের বেজ এর ওপর গোলাকার স্টিলের স্ট্রাকচার দ্বারা নির্মিত হবে। স্মৃতি স্তম্ভটি হবে ৩৮০ বর্গফুট যার বেজের ব্যাসার্ধ্য হবে ১৮ ফুট, উচ্চতা  ১৮ ফুট এবং ব্যাসার্ধ ৬ ফুট। সারা দেশের ৬৪ জেলায় একই নকশায় এ স্মৃতি স্তম্ভটি নির্মাণ করা হবে। কংক্রিটের বেজ এর ওপর গোলাকার স্টিলের স্ট্রাকচার ঢাকা থেকে সারা দেশে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া বাকি বেজের স্ট্রাকচার গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ববধানে নির্মাণ করা হবে।

উক্ত সভায় স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপনের সম্ভাব্য ২টি স্থানের প্রস্তাব পেশ করেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ। চুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনাররের উল্টোদিকে মুক্তমঞ্চ ও পুরাতন জেলখানার  জমিতে স্তম্ভটি তৈরি করার প্রস্তাব পেশ করেন। জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের পাশে নির্মাণ করার দাবী জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা শাখার সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্র জনতার এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল তাই জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনেই হওয়া উচিত। সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের হাসান চত্বর সংলগ্ন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের পরিত্যক্ত জমিটি স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপনের জন্য নির্বাচন করা হয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, এই স্তম্ভ শুধু পাথর আর কংক্রিটের স্থাপনা হবে না, এটি হবে ইতিহাস ধারণকারী এক আলোকবর্তিকা। যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে শহিদদের আত্মত্যাগ, গণঅভ্যুত্থানের চেতনা। বড়বাজার হাসান চত্বর একটি জনবহুল এলাকা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পার্শ্ববর্তী স্থান হওয়ায় স্মৃতি স্তম্ভের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণে সকলের সার্বিক সহায়তা কামনা করেন।

উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম , অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অফস) কনক কুমার দাস, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম,  চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, মুখ্য সংগঠক সিরাজুম মনিরা, এবি পার্টির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক মানিক আকবর, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ খালিদ হাসান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মোঃ হাসানুজ্জামান প্রমুখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *