মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরে পবিত্র আশুরা পালনে মেলার আয়োজন করা হয়।
উক্ত মেলায় শতর্বষী গাছের গোড়ায় দুধ ঢেলে মানত! রোগমুক্তির আশায় ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই
মিলেছে রোগমুক্তি অথবা মনোবাসনা পুর্ণ হওয়ার আশায় কেউ জ¦ালাচ্ছেন আগরবাতি, ঢালছেন গাভীর দুধ, দিচ্ছেন খিচুড়ি, ঢেলে দেওয়া দুধ ও মাটি মাখছেন মুখে, বুকে ও কপালে। এরকম দৃশ্য দেখা যায় আশুরার দিনে আয়োজিত মেলার মাঠের পাশের দেড়শ’ বছরের পুরানো নিম গাছের গোড়ায়। এ গাছের গোড়ায় মানত করলে নাকি রোগমুক্তি হয়। এমন কথা শুনেই দুর দূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ ছেলে বুড়ো সকলেই ছুটে আসে মানত করতে। কেউ আসে আগের বছরের মানত দেওয়ার জন্য। প্রতিবছর ১০ মহরমের দিনে মেলার আয়োজন করা হয় মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলার সিমান্তবর্তী গ্রাম কুতুবপুরে। দিনটি ঘিরে কুতুবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মেলা বসে। তবে কারো মনোবাসনা পুর্ণ বা কোন রোগমুক্তি হয়েছে কি-না সে বিষয়ে জোরালো দাবি করে বলতে পারেনি কেউ। এই গাছের নিচের ঘটনার কোন দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা আয়োজকরা সেটাও জানাতে পারেনি। তবে ধর্মীয় নেতারা বলছে ভিন্ন কথা, এ ধরনের কোন কাজকে ইসলাম সর্মথন করেনা না। এধরনের মানত কাজ সরাসরি শিরক করার শামিল।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে কুতুবপুর গ্রামের ভৈরব নদীর পাড়ে রয়েছে একটি শতবর্ষী নিম গাছ। জনশ্রুতি রয়েছে এ গাছের গোড়ায় মানত বা শিরনী দিলে নাকি রোগ মুক্তি মেলে পুরণ হয় মনোবাসনা। এ বিশ^াসে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন মানত দিতে। সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রাম থেকে ছোট বাচ্চা নিয়ে আনোয়ার হোসেন এসেছিলেন মানত করতে। তিনি জানান, বিশ^াসের উপর মানত করা হয়। আমার নাতির বয়স ১০ বছর জন্মের পর থেকেই প্রতিবছর এখানে আসি গাছের গোড়ার মাটি বুকে কপালে লাগায়, দশটা টাকা দেয় এখানে।
ওামদাসপুর গ্রামের গৃহবধূ গাভির দুধ আগর বাতি আর কিছু টাকা এনেছেন ফেরদৈসি খাতুন। নিজ হাতে দুধ ঢাললেন গাছের গোড়ায়। জ¦ালালেন আগর বাতি। আর টাকাগুলো গাছের গোড়ায় বসে থাকা দুজনের কাছে জমা দিলেন। তিনি জনান, আমার ছেলের বুকে সমস্যা হয়েছিলো এখানে মানত করার পর সে সমস্যা ভালো হয়েগেছে, তাই গত ৪-৫ বছর ধরে মানতের দুধ দেয় আগরবাতি জ¦ালায়।
বণ্যা খাতুন এসেছেন মেহেরপুর থেকে খিচুড়ি, আগরবাতি, টাকা নিয়ে। শুনেছি এখানে একশ থেকে দেড়শ বছর ধরে মানুষ এখানে মানত করে। আমাদের একটা মানত ছিলো সেটা পুরণ হয়েছে তাই ৫-৭ বছর হলো প্রতিবছর মহরমের দিন এখানে মানত দিয়ে যায়। একই রকম কথা জানান, শুভরাজপুর গ্রামের ছিয়াতন, খেতু খাতুনসহ অনেকেই।
গাছের গোড়ায় বসে থাকা জাকেত আলী, প্রতিবছর এই দিনে সকাল থেকে বসে গাছের গোড়া পাহারা দেন তিনিসহ আরো কয়েকজন। রোগমুক্তির আশায় অনেকে দুধ ঢালেন, চাল ডাল খিচুড়ি, চিনি আর টাকা দেন অনেকেই। খিচুড়ি মানুষজনকে দেওয়া হয়। জমা হওয়া টাকা কি করেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেলা শেষ হলে এ ছাগল, মুরগী ও টাকা দিয়ে কমিটির লোকজন সব খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়ে পিকনিক করেন।
গাছের নিচে দুধ ঢেলে ও বিভিন্ন উপকরনের মাধ্যমে মানত করার বিষয়ে গাংনী পুর্ব মালসাদহ সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, আশুরা নিয়ে গাছে গোড়ায় যে দুধসহ নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য দেওয়া মানত করা, গাছের কাছে সাহায্য চাওয়াসহ ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে এই কর্মকান্ড সম্পুর্ণ শিরক। এটি গ্রহনযোগ্য নয় ইহা পরিত্যায্য বিষয়। এধরনের কাজকে ইসলাম সর্মথন করে না।