মুন্না রহমান
শরতের হিমেল হাওয়ায় জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে জেলা জুড়ে বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে রং তুলি হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। গত ২১ তারিখ রবিবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। অনেক মণ্ডপেই প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ। চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপী এবার ১১২ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। দক্ষ কারিগর দ্বারা মাটির প্রলেপ ও রং তুলির ছোঁয়ায় চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা গুলো। ধুমধাম করে চলছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ। এ সময় ডেকোরেটর মালিক মোঃ হাসান আলী বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছি। প্রায় ১ লক্ষ টাকার ডেকোরেশন করা হচ্ছে এবার। গত ১৮তারিখ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি, আশা করি ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যেই আমরা এই কাজ সম্পন্ন করতে পারব।
বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির দপ্তর সম্পাদক শ্যামল কুমার নাথ বলেন, এবারও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বড় বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। আমাদের পূজা মন্দিরে এবার ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তাছাড়াও প্রশাসনের তৎপরতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করছি আমরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিবি ও এনএসআই এর সদস্যরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং মন্দির পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহায়তা পাচ্ছি আমরা। সকল জাতি, ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে এই উৎসবকে সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি। বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সদস্য সৌরভ সাহা সনি বলেন, প্রতিমা তৈরীর কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ব্যাপক হারে আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত হচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গন। প্রতিমা তৈরিতে এবার ব্যয় হয়েছে ১ লক্ষ ২০হাজার টাকা। দূর্গাপূজা সম্পন্ন হতে আনুমানিক ৬ লক্ষ টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। এই মন্দিরটি মূলত সরস্বতী পুজোর জন্য বিখ্যাত। তারপরও এই মন্দিরে ধুমধাম করে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার কাপড়ের দোকান গুলোতেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুজোকে সামনে রেখে যে যার মত কেনাকাটায় ব্যস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের বি এন বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী দেবীপ্রসাদ বাগলা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতাদের ভিড় বেশি। দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত এই ভিড় থাকতে পারে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে দোকানে এমন ভিড় থাকলেও পণ্যের দাম স্বাভাবিকই আছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কেনাকাটা করতে যায়। কিন্তু ভিসা জটিলতা থাকায় এইবার অনেকেই যেতে পারছে না। তাই অনেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো থেকেই কেনাকাটা করে নিচ্ছেন। এতে করে এ বছর কাপড়ের দোকান গুলোর ক্রেতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা প্রসাশন থেকে জানানো হয়, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যাপী ১১২টি মন্ডপে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫টি, দামুড়হুদা উপজেলা ২১টি, জীবননগর উপজেলায় ২৫ টি এবং সদর উপজেলায় ৩১ টি মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। নিরাপত্তার জন্য পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সর্বদা টহল মোতায়ন থাকবে।
জেলা পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১১২টি পূজা মন্ডপ গুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ এই তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ টি মন্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৪১টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫৩টি মণ্ডপকে সাধারন হিসেবে ধরা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তরে যে মণ্ডপগুলোকে ধরা হয়েছে সেগুলোতে স্থায়ীভাবে দুইজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিদ্র কুমার মন্ডল বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় শারদীয় দূর্গা উৎসব পালন করা হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতীর দেশ। তবে দূর্গা উৎসব সবাই মিলে মিশে উদযাপন করি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সুষ্ঠুভাবেই শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। কোন দুষ্কৃতিকারী যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যে প্রশাসন সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকবে।