অনলাইন ডেস্ক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকায় সাদাপাথর লুটের ঘটনায় তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৪ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর কে এম নুরুন্নবী এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিট আবেদনে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পরিবেশ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ মোট ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এই রিট আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ভোলাগঞ্জ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল এবং সাদা পাথরের জন্য সুপরিচিত পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই এলাকায় কোটি কোটি টাকার সাদা পাথর প্রকাশ্যে লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিকমাধ্যমে এসব অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় রাতের আঁধারে সীমিত পরিসরে পাথর চুরি হলেও এখন আর কোনো গোপনীয়তা নেই। দিনে-দুপুরে প্রশাসনের সামনে দিয়েই ট্রাক বা নৌকায় করে পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকি কোথাও কোথাও পাথর চুরি এতটাই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে যে, স্থানীয়দের ভাষায়—প্রশাসন দেখেও কিছু করছে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রশাসনের মদদ ও ব্যর্থতার কারণেই লুটপাট এতটা নির্লজ্জভাবে বাড়ছে। তারা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এই লুটপাট ব্যাপকভাবে শুরু হয়। যদিও পরে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কিছু তৎপরতায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসে, তবে তাতে স্থায়ী কোনো ফল হয়নি। সুযোগ পেলেই আবার শুরু হয় চুরি।
জানা গেছে, প্রশাসন মাঝে মাঝে ধলাই নদীতে অভিযান চালালেও তা নামমাত্র। সপ্তাহে ছয় দিন চলে অবাধ লুটপাট, আর একদিন লোকদেখানো অভিযান। ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পাথর কেনাবেচার মূল রুট ও বড় নৌযানের গন্তব্যস্থলে অভিযান না হওয়ায় মূল সিন্ডিকেট ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার (১৩ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে তারা কী তথ্য পেয়েছে এবং অভিযানে কোনো দোষীকে শনাক্ত করেছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এদিকে পরিবেশবিদরা এই পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম উপাদান। এভাবে পাথর তোলা অব্যাহত থাকলে এলাকার প্রাকৃতিক গঠন ও নদী ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মীর কে এম নুরুন্নবী বলেন, “এটা শুধুমাত্র একটি অবৈধ ব্যবসা নয়—এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের সামিল। প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে এগুলো রক্ষা করা। কিন্তু তারাই যদি ব্যর্থ হয় বা মদদদাতা হয়, তাহলে হাইকোর্ট ছাড়া আমাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না।”
রিটে অনুরোধ জানানো হয়েছে, আদালত যেন এই লুটপাটের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেন।