আলমডাঙ্গার ডাউকিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জবরদখলে আটটি অবৈধ স্থাপনা, উচ্ছেদ নোটিশ অমান্য

আলমডাঙ্গা অফিস

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে খতিয়ানি জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিদ্যালয়ের রেকর্ডভুক্ত জমি (মৌজা: ডাউকি, জেএল-৭৭, খতিয়ান নং-৩, দাগ নং-১৪২৮৬) দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান, গোডাউন, গরুর খামার ও ওষুধের ফার্মেসি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচনা ও প্রতিবেদন প্রকাশের পরও এখনো পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনাগুলো সরানো হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে দখলদারদের উদ্দেশে একটি উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে ১৫ দিনের মধ্যে জমি খালি করতে বলা হয়। কিন্তু নোটিশ উপেক্ষা করে দখলদাররা এখনও স্থাপনায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ স্থাপনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন চা দোকানদার জাহাঙ্গীর, মুদিখানার মালিক আতিয়ার, গরুর খামারের মালিক মতিয়ার মালিতা, ফার্মেসির মালিক হাসান, কাপড় ও ছবির দোকানের ইদ্রিস আলী এবং গোডাউনের মালিক আশরাফুল। এদের মধ্যে অনেকে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। যেমন আশরাফুল ডাউকি ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে এলাকায় পরিচিত। এছাড়া ইউনুস আলী, শহিদুল ও জোর আলী নামেও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ডাউকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এডহক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান রেজা বলেন, “বিদ্যালয়ের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা এটি উদ্ধার করতে চাই। প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল শাহ বলেন, “আমি গত তিন বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার পূর্ববর্তী শিক্ষক এ বিষয়ে কিছু জানতেন কি না তা আমার জানা নেই। কোনো চুক্তিপত্র বা ভাড়ার কাগজ আমাদের হাতে নেই। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় বিদ্যালয়ের জমিতে জোরপূর্বক এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এরা স্কুলের কোনো ভাড়া দেয় না, কোনো ফান্ডে টাকা দেয় না—বরং প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করেই চলছে। আমরা চাই অবিলম্বে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিদ্যালয়ের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক, যেখান থেকে আয় হবে এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়নে তা ব্যবহার করা যাবে। যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, আমরা এলাকাবাসী মিলে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন,

“বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদনও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। অবৈধ দখলদাররা স্বেচ্ছায় জমি ছাড়তে না চাইলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি কোনোভাবেই দখলে থাকতে দেওয়া হবে না।”

এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হলেও এখনো পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, সরকারি জমি রক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে অবিলম্বে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে স্কুলের দখল ফিরিয়ে দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *