বাবা বিয়ে করেছে শুনেই ছেলে কোপালেন বাবাকে

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় গোলাপ ফকির (৫৫) নতুন করে বিয়ে করেন। অবশ্য এ বিয়েতে প্রথম পক্ষের এক ছেলের মত ছিল না। মতের বাইরে গিয়ে বিয়ে করে নতুন বউ বাড়িতে আনার পর ক্ষোভে তিনি বাবাকে কুপিয়ে জখম করেছেন বলে অভিযোগ। গোলাপ ফকিরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়।

গোলাপ ফকির উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ লামকাইন গ্রামের মৃত আবদুল বারিক ফকিরের ছেলে। তাঁর প্রথম স্ত্রী হালিমা বেগম ২০১৯ সালে মারা যান। গোলাপের প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে প্রবাসে ছিলেন গোলাপ ফকির। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দেশে চলে আসেন। কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বয়স বাড়তে থাকায় গোলাপ ফকির নিজের দেখাশোনার জন্য আবার বিয়ে করতে সন্তানদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাবার এ আগ্রহের প্রতি দুই মেয়ে ও এক ছেলের সম্মতি থাকলেও এক ছেলে রাজি হচ্ছিলেন না। ওই ছেলের নাম সাদ্দাম ফকির (৩০)। তিনি জানান, সৎমাকে দেখাশোনা করবেন। সেই বিয়ের আগে জমিজমা সব ভাগ করে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে গোলাপ ফকিরের মেয়ে রানী বেগম ও স্বজনেরা মিলে গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরে গোলাপ ফকিরকে বিয়ে করান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোলাপ ফকির শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে নতুন বউ নিয়ে বাড়িতে আসেন। এর ঘণ্টাখানেক পর দা নিয়ে বাবার দিকে তেড়ে যান সাদ্দাম। এ সময় বড় বোন রানী বেগমকেও মারধর করেন। ছেলের হাত থেকে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করেন গোলাপ ফকির। এ সময় দৌড়ে এসে তাঁর দুই হাত ও ঘাড়ে কোপ দেন ছেলে। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে এলে পালান সাদ্দাম। পরে গোলাপ ফকিরকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার গোলাপ ফকির বলেন, ‘আমি বিদেশে উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠালে অনেক টাকা নষ্ট করেছে ছেলে সাদ্দাম। টাকার হিসাব চাইলে আগেও আমাকে মারধর করেছে। কাল বিয়ে করে বউ আনায় আমাকে কুপিয়েছে। সে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। অনেক কান্নাকাটি করেও তার (সাদ্দাম) দায়ের কোপ থেকে বাঁচতে পারি নাই।’

মুঠোফোনে গোলাপ ফকিরের মেয়ে রানী বেগম বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর বাবাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করার জন্য সঙ্গী দরকার। আমরা বাবার বিয়েতে রাজি থাকলেও সাদ্দাম রাজি হচ্ছিল না। সে জমিজমা লিখে দিয়ে এবং ৩৬ লাখ টাকা দিতে বলছিল। বাবা জমিজমা ভাগ করে দিতে রাজিও হয়। এর মধ্যে আমরা বাবাকে বিয়ে করিয়ে শনিবার বিকেলে নতুন মাকে নিয়ে বাড়িতে আসি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ও আমার বাবাকে কুপিয়েছে।’

ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন সাদ্দাম ফকির। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, বাবা বিয়ে করায় ছেলে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *