চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে

সোহেল রানা বাবু, কুতুবপুর প্রতিনিধি

যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত, আর শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যম হচ্ছে বিদ্যালয়। কিন্তু ‘দৈনিক আজকের চুয়াডাঙ্গা’ পত্রিকার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার ভয়াবহ চিত্র। চুয়াডাঙ্গা সদরে কুতুবপুর ইউনিয়নে মোট তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত ৫ বছরে এ  ৩ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার হার ৩২.৪৫ ভাগ।

সরেজমিনে তিনটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মহাম্মদজমা ডি এএস এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ৬৪ জন একই শিক্ষার্থীগণ যখন ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিল তখন সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জন, ঝরে গেল ৩০ জন। ঝরে যাওয়ার হার শতকরা ৪৬. ৮৭ ভাগ। কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ভর্তি শিক্ষার্থী ছিল ৬১ জন, ২০২৫ সালে একই শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৩৭ জন। ঝরে যাওয়ার হার শতকরা ৩৯.৩৪ ভাগ। অপরদিকে আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ভর্তি শিক্ষার্থী ছিল ২১৪ জন, ২০২৫ সালে একই শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিল ১৫৮ জন। ঝরে গেল শতকরা ২৬.১৬ ভাগ। তিনটি বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে মোট ভর্তি হয়েছিল ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী, ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিল ২২৯ জন। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০ জন যা শতকরা ৩২.৪৫ ভাগ।

ঝরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ‘মহাম্মদজমা ডি এ এস এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের উদাসীনতা, বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম, প্রবাস এবং দারিদ্র্যতা দায়ী। তিনি আরো বলেন, আমাদের অজান্তেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আমরা অনেক পরে জানতে পারছি। এমনকি আমাদেরকে আবার সেই বিয়ের দাওয়াতও খেতে হয়।

অনেকেই বলেন, এসব শিক্ষার্থী সবাই ঝরে গেছে তা নই। অনেকে বিদ্যালয় পরিবর্তন করেছে, আবার কেউ পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এমন সংখ্যাও কম নয়।

কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি আবু আসলাম সোহাগ বলেন, শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার হার গ্রাম অঞ্চলের স্কুল গুলোতে বেশি। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুশীল সমাজ নিয়ে মিটিং করেছি এবং আলোচনা চলমান রয়েছে। স্কুলে একটি মোবাইল ফোন রেখেছি। যে শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না, আমরা ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছি নিয়মিত। তাছাড়া হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি আর অভিভাবকগণ এখন সচেতন হচ্ছে আশা করি আমরা শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার হার কমাতে পারব।

দশমী গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেন, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস, সাপ্তাহিক পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের মোটিভেশান, নিয়মিত অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীর পড়ালেখা নিয়ে আলোচনা করলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *