শীতের আগমনে সবজি চাষে ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার হাজারো কৃষক

মুন্না রহমান, স্টাফ রিপোর্টার

ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গার বাজারে উঠতে শুরু করেছে দেশীয় শীতকালীন নানান সবজি। শীতকালীন শাক-সবজি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলার কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সবজি চাষে স্বল্প সময়ে লাভবান এবং প্রতিনিয়ত নগদ অর্থ পাওয়া যায় বলে কৃষকরা সবজি চাষে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জমিতে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, আলু, গাজর, শসা, সিম, পালং শাক, ব্রকলি , মূলা, লাউ, মরিচসহ বিভিন্ন রকম সবজি উঠতে শুরু করেছে। বরাবরই চুয়াডাঙ্গায় শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হলেও বর্তমানে সার সংকটে কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে শীতকালীন সবজির ফলন আশানুরূপ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে ৩ হাজার ৭শ ৮৮মেট্রিক টন। টিএসপি সারের মজুদ রয়েছে ২শ ১৯ মেট্রিক টন। ডিএপি সারের মজুদ রয়েছে ৬শ ৫ মেট্রিক টন এবং এমওপি সারের মজুদ রয়েছে ১ হাজার ২শ৫৮ মেট্রিক টন। চলতি রবি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় শীতকালীন শাকসবজির পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এবার গম ৯৩২ হেক্টর, ভুট্টা ৪৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর, আলু ২ হাজার ২০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।  ইতিমধ্যে ভুট্টা ১ হাজার ২শ হেক্টর, আলু ৩০ হেক্টর ও শীতকালীন শাকসবজি ৭ শ ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকী জমিতে ভুট্টা, আলু ও সবজি আবাদ করা হবে। তবে গত বছর ভুট্টা ও আলু চাষে কৃষকরা কিছুটা লোকসানের মুখে পড়ে। এর ফলে চলতি রবি মৌসুমে আলু ও ভুট্টা চাষ কম হওয়ার পাশাপাশি সবজি আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

এছাড়া ছোলা ৬ হেক্টর, খেসারী ২৪ হেক্টর, আখ ১হাজার ১শ৪৪ হেক্টর, শীতকালীন পেঁয়াজ ১হাজার ৫শ ৩৫ হেক্টর, মসুরি ২৯৩ হেক্টর, মটর ৪৭ হেক্টর, সরিষা ৩হাজার ৭শ ১৫ হেক্টর, সূর্যমুখী ৪ হেক্টর, রসুন ৩শ৫ হেক্টর, মরিচ ৮শ ৫৭ হেক্টর, ধনিয়া ৪শ ৭৩ হেক্টর, ফুল ৫৯ হেক্টর, পান ১হাজার ২৬৪ হেক্টর এবং তামাক ৩শ ১০ হেক্টও জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ধুতরহাট গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়ে চারা রোপন করেছি। ইতিমধ্যেই লাউ, শসা, ঢেড়শ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। আমার চাষযোগ্য জমিগুলোতে আমি প্রতিবছরই সবজি চাষ করি। তবে এ বছর সার সংকটের কারণে সবজির ফলন হয়তো খুব একটা ভালো হবে না। শীতকালীন সবজি চাষ করতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয়। সারের সরবরাহ ঠিক থাকলে সবজি ফলন আরো ভালো হবে বলে আমি মনে করি।

সবজি চাষী কদর আলী বলেন, আমি এবার প্রায় দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুযায়ী ফলন বেশ ভালোই হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ফুলকপিতে ছত্রাক জনিত রোগবালাই দেখা দিয়েছে। এ সকল রোগবালায় নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জমিতে যে পরিমাণ চাষ আছে সে পরিমাণ সার আমরা পাচ্ছি না। বাংলা টিএসপি ও বাংলা ডিএপি সার বাজারে নেই বললেই চলে। যদিও কোন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে তাও কিনতে হচ্ছে চড়া মূল্যে। ২৭ টাকা কেজির বাংলা টিএসপি সার কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকায়। অপরদিকে ২১ টাকা কেজির ডিএপি বিক্রি হচ্ছে ৩০/৩২ টাকা কেজি দরে। ডিলারদের কাছে সার কিনতে হলে সকাল থেকে লাইন দিতে হচ্ছে। তারপরেও মিলছে না সবটুকু সার। এ সার সংকট কেটে গেলে সবজি চাষের ফলন আরোও ভালো হবে বলে আমরা মনে করি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গার মাটি এমনিতেই খুবই উর্বর। মাটিতে ফসফরাস ও টিএসপির পরিমাণ বরাবরই বেশি। তবুও কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছেন। চুয়াডাঙ্গা তে অন্যান্য চাষের মধ্যে সবজি চাষটাও বেশি হয়ে থাকে। মাটিতে সঠিক মাত্রায় করলে সার প্রয়োগ করলে শাকসবজি চাষের ফলন ভালো হয়। সকল কৃষক যদি সঠিক পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন এবং মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করেন তাহলে ফলাফল আরো ভালো হবে। কৃষকদের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ কমাতে হবে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে প্রতিবছরই শীতকালীন শাক সবজির চাষ হয়ে থাকে। এবছর চুয়াডাঙ্গায় ৮ হাজার ৬শ ৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গাতে বিপুল পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে সারের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। কৃষকদের শাক সবজির সঠিক ফলন পেতে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গার জমিগুলোতে বর্তমানে ৬৫ শতাংশ ফসফরাস বিদ্যমান। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ জমির জন্য হুমকিস্বরূপ। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ জমির ফলন কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। কৃষকরা এ বিষয়ে  সচেতন হলে মাটির গুনাগুন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *