স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতা মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল রবিবার ভোর রাতে ঢাকার ধানমন্ডির একটি বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো (৪৮) বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও ৩ সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। তার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিপলুর আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিষ্টভাষী মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর নামাজে জানাজা আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। পরে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে গতকাল বিকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর বাবর রোডের আল মারকাজুল ইসলাম আল মাদানি মসজিদের সামনে শিপলুর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশবাহী গাড়ী তার মরদেহ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশবাহী গাড়িটি চুয়াডাঙ্গার উদ্যোশ্যে আসিছিল।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন ফরিদুল ইসলাম শিপলু। চিকিৎসা শেষে গতকাল রবিবার তার কিছু মেডিকেল টেস্ট করার কথা ছিল। শনিবার রাতে ঢাকার ধানমন্ডিতে ছোট ভাইয়ের বাসায় একাই অবস্থান করেছিলেন। সর্বশেষ রাত দেড়টার দিকে তার স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনযোগে কথা হয়। সকালে তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার তাকে মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে গতকাল দুপুর ১২ টার দিকে তার ছোট ভাই রাতুল ও পরিবারের সদস্যরা ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে শিপলুকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। ফরিদুল ইসলাম শিপলু গত দেড় বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। গত বছর হার্টে ব্লক ধরা পড়লে রিং পড়ানো হয়। পরিবারের সদস্যরা ধরনা করছেন হৃদরোগ আক্রান্ত তিনি মারা গেছেন। তবে কখন মারা গেছে সেটা কেউ বলতে পারছেন না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু চুয়াডাঙ্গার কোর্টপাড়া নিবাসী। মরহুম আব্দুল হক ও আমেনা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন শিপলু। মেঝো ভাই মির্জা বিপুল নেত্রকোনার জেলার পুুলিশ সুপার। ছোট ভাই রাতুল। মির্জা শিপলুর রয়েছে তিন ছেলে সন্তান। বড় ছেলে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, মেজো ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৬ বছর। তার এই অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার মৃত্যুর সংবাদ গতকাল সারাদিন সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ ফোন করে তার মৃত্যুর সংবাদ জানতে চাই।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক মোমিন মালিতা বলেন, দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে আমরা তার মৃত্যুর খবরটি জানতে পারি। সন্ধ্যার দিকে তার লাশবাহী গাড়িটি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। মধ্য রাতে তার লাশ পৌছাতে পারে। তার অমায়িক ব্যবহার নেতা কর্মিরা দীর্ঘদিন তাকে মনে রাখবে।
মির্জা শিপলু এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক এ্যাড. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শণে গভীরভাবে আস্থাশীল মরহুম মির্জা শিপলু চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী, গতিশীল ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। আমি তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছি। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করি তিনি যেন মির্জা শিপলু-কে জান্নাত নসীব এবং শোকাহত পরিবারবর্গকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।” বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু’র মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি)’র ভাইস চেয়ারম্যান ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু। তিনি শোক বার্তায় মরহুম মির্জা শিপলু চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী, গতিশীল ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন।
অপরদিকে মির্জা শিপলুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমই সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।
মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মৃত্যুতে জামায়াতের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আমীর মো: রুহুল আমিন, সেক্রেটারি অ্যাড. আসাদুজ্জামান জেলা সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, পৌর জামায়াতের আমীর অ্যাড. হাসিবুল ইসলাম, সেক্রেটারি মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি সাগর আহমেদ ও সেক্রেটারি হাফেজ আমিরুল ইসলাম শোক জ্ঞাপন করেছেন।
এছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলু, জেলা যুবদলের সভাপতি শরিফুজ্জামান সিজার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, চুয়াডাঙ্গা পৌর পিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামিম রেজা ডালিম, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেহালা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আসিরুল ইসলাম সেলিম, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, সহ-সভাপতি আরিফুজ্জামান পিন্টু, সহ-সাধারণ সম্পাদক পিনু মুন্সি শোক প্রকাশ করেছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য জেলা বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু‘র মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন,একজন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী, অমিত সম্ভাবনাময়ী তরুন তুর্কি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মৃত্যুতে বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ছাত্রদলের মাঝ থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব মির্জা শিপলু ছিলেন অনেকের জন্য অনুকরণীয়।