খন্দকার শাহ আলম মন্টু, আলমডাঙ্গা
১৯৩৬ সালে আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের নানাবাড়ি জন্ম গ্রহন করেন মীর শামসুজ্জোহা । বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুর। বাবা- মরহুম মীর শামসুদ্দিন আহাম্মদ (শিক্ষক), মা- মরহুমা লুৎফুন্নেছা বেগম (গৃহিণী)। প্রাথমিকে পড়াশোনা হারদী প্রাইমারি স্কুলে। পরে ভর্তি হন আলমডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পায়ে হেঁটে ৪ মাইল দূরে অবস্থিত বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে মেট্রিকুলেশন শেষে খুলনা আযম খাঁন কমার্স কলেজে ভর্তি হন। খুলনা পিপলস জুট মিলে চাকুরী করে ও নাইট কলেজে পড়াশোনা করে সেখান থেকে আই,কম পাস করে পরবর্তীতে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ হতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে। পরে অধ্যয়ন করেন চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ)। সিএ পাস করার পর পাড়ি জমান লন্ডনে বড় ভাই প্রবাসী ডাঃ সামসুল আলমের নিকট । সেখানে গড়ে তোলেন বিখ্যাত “জোহা এন্ড কোম্পানি” চাটার্ড এ্যাকাউন্ট অডিট ফার্ম।
তার কর্মজীবন লন্ডনে হলেও জন্মভূমিকে কোনোদিন ভুলতে পারেননি। তিনি নিজ এলাকা ও দেশের জন্য যা করেছেন, তা অনন্য। এম.এস হুদা ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, এম.এস জোহা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এম.এস জোহা কৃষি কলেজ ও এম.এস জোহা বিজনেন্স ম্যানেজমেন্ট কলেজ তথা নিপ্পন জোহা এডুকেশন কমপ্লেক্স। প্রতিষ্ঠা করেছেন মীর শাসসুল ইসলাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। এছাড়া তার ভাবি নার্গিস ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত নার্গিস ইসলাম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। ছয় বছর বয়সে ল্যাবরেটরীতে গ্যাস বিস্ফোরণে মৃত্যু ঘটে বড় ছেলে নিপ্পন জোহার। যার নামে এই ক্যাম্পাসে নিপ্পন জোহা টেকনিক্যাল স্কুল এস.এস.সি (ভোক) প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর পিতার নামে হারদী গ্রামে মীর সামসুদ্দীন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারঁ/পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এখন বৃহত্তর কুষ্টিয়ার সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে। তাঁর কল্যাণে হারদী গ্রাম আজ শিক্ষাপল্লীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
দানবীর জোহার দান শুধু আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামেই সীমিত ছিল না। বহু পূর্ব থেকেই তার নামে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়েও জোহা স্টাইপেন্ড চলমান রয়েছে। আলমডাঙ্গা কলেজের নিপ্পন জোহা লাইব্রেরী তারই দানে গড়া। অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর দান সুবিদিত। মীর শাসসুদ্দিন আহম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় তার পিতার নামে উৎসর্গীত। এছাড়া দান রয়েছে আলমডাঙ্গা বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জের সৃজনী মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ, ভোগাইল বগাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে, গাংনী উপজেলার গোপালনগর বেগম লুৎফুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর খন্দকারপাড়ার ঈদগাহ ময়দান ও খেলার মাঠ সহ আশপাশের কয়েকটি জেলার অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ মাদ্রাসায় রয়েছে তার অনুদানের স্বাক্ষর।
মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি লন্ডনে অবস্থান করেও আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
উপরোক্ত দানের প্রেক্ষিতে এবং কৃতজ্ঞতাস্বরুপ এলাকার আপামর জনসাধারণ মীর শামসুজ্জোহা ও হামিদা জোহাসহ এই দানপ্রবণ পরিবারটিকে দাতাপরিবার নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোন। বড়ভাই প্রয়াত ডাঃ মীর শামসুল আলম, এম.আর.সি.পি লন্ডনে বসবাস ও কর্মস্থল ছিল। মেজ ভাই মরহুম মীর সামসুল হুদা ছিলেন সাবেক ফরেষ্ট রেঞ্জার। সেজ স্বয়ং মীর শামসুজ্জ্বোহা, ৪র্থ ভাই মরহুম মীর শামসুল আজম, এম.এ (অর্থনীতি)।
স্ত্রী হামিদা জোহা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন ও একমাত্র ছেলে ডাঃ ময়েন জোহা লন্ডনে ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত আছেন। আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অংক শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মরহুম আবুল হোসেন ও আমেরিকার বিখ্যাত চেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোনায়েম চৌধুরী তাঁর ক্লাসমেট ছিলেন। ২০০২ সালের ২২ শে ডিসেম্বর লন্ডনে মীর শামসুজ্জোহা না ফেরার দেশে পারি জমান।