স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় ও আলমডাঙ্গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার নবম দিনে পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয় সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। এসময় বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ হাত নেড়ে অভিবাদন জানায়। গতকাল বুধবার বেলা ১১ টায় আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়ায় পথসভা করেন। পরে বেলা ১টায় আলমডাঙ্গা অলিফ মোড়ে পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ। বেলা ২ টায় চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে উপস্থিত হন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীরা।
চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সভাপতি অন্তবর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ২০২৪ এ একটা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। বিবিসির একটা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে শেখ হাসিনা নিজেই গুলি চালানোর অর্ডার দিয়েছিলেন, এই সকল হত্যাকাণ্ডের জন্য এই খুনি হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগ দায়ী। খুনি হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছে, ভারত সরকার এখন খুনি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগদের আশ্রয় দিচ্ছে। চুয়াডাঙ্গাসহ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত ৫৪ বছরে সীমান্তে মানুষ হত্যা হচ্ছে। নিরপরাধ বাংলাদেশী মানুষদেরকে, কৃষকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। দর্শনা সীমান্তে এক কৃষককে হত্যার ৭ দিন পর তার লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। বিএসএফ কোন সীমান্তরক্ষী বাহিনী নয় বরং একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষদেরকে খুন করায় যেন তাদের একমাত্র দায়িত্ব।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র জনতা অবশ্যই তার সীমান্তকে ও মানচিত্রকে রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্তে মানুষ হত্যা, কৃষক হত্যা আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না। ভারত যদি আমাদের সাথে সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়, সমতার ন্যায্যতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতেই সেই সম্পর্ক হতে হবে। বাংলাদেশই কেবল ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয় বরং ভরতের সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। এটা যেন ভারত কোনভাবে ভুলে না যায়।
তিনি আরো বলেন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা একটি বৈষম্যহীন এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম কিন্তু আমরা দেখছি চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও দখলদারিত্বে সারা বাংলাদেশ ছেয়ে গিয়েছে। ছাত্র জনতা আপনাদের পাশে আছে যারা দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজদের পক্ষে আছে আপনারা তাদেরকে বয়কট করুন। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চুয়াডাঙ্গা বাসীকে অভয় দেন তিনি।
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন এক বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সহ বাংলাদেশের প্রতিটা জায়গায় যেভাবে মাদক, চোরাকারবারি ও মামলা বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়ম ছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। আমাদের শহীদ ভাইয়েরা লড়াই করেছে তাদের আকাংখা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির এই পথ চলাতে সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, ডাক্তার তাসলিমা জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা ফারুক, চুয়াডাঙ্গা জেলা সমন্বয়কারী খাজা আমিনুল বাসার বিপ্লব সহ কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছেছ, চলমান “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলমডাঙ্গায় পথসভা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় আলতায়েবা মোড়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ নেতারা রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে ধর্ম, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হবে। দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত আমরাও প্রস্তুত।”তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সংবিধান সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। আমরা চাই এমন একটি সংবিধান, যেখানে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা থাকবে কেন্দ্রবিন্দুতে।”অতীত সরকারগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার আমলে মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্ত জরুরি। ভারত সরকার তাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, যা ইতিহাসে লেখা থাকবে।”
তবে এই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি নিয়ে। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাটবোয়ালিয়া এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে এনসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত ছিল নতুন কুড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেরিট মডেল স্কুল, হাটবোয়ালিয়া বালিকা বিদ্যালয় এবং হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পথসভা থেকে বলেন, “তোমাদের ভালোবাসায় আমরা গর্বিত, তবে পড়াশোনাই এখন তোমাদের প্রধান দায়িত্ব। ক্লাস ফেলে পথে আসা কখনোই কাম্য নয়।”
পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। এনসিপির নেতারা জানিয়েছেন, জুলাইজুড়ে সারা দেশে এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।