স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু মজুদ থাকায় এবার কোরবানীতে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। খুব সুন্দরভাবে এ জেলার মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করেছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কোরবানী সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন
তিনি আরও জানান, সরকার এবার বিনামুল্যে ৮০ মেট্রিক টন লবণ চামড়া সংরক্ষণের জন্য দিয়েছে। জেলার প্রায় ১শ অধিক মাদরাসা, লিল্লাহ বোডিং ও এতিমখানার প্রধানদের সাথে প্রথমে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে চামড়া সংরক্ষণের জন্য। যোগাযোগের এক পর্যায়ে প্রায় ৫০টির অধিক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণে রাজী হওয়ায় তাদের সাথে আমরা মিটিং করেছি। মিটিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে চামড়া সংরক্ষণ করবে এসব বিষয়ে বিষদ আলোচনা করে ২১টি প্রতিষ্ঠান রাজি হয়। তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী গরুপ্রতি ৮ কেজি ও ছাগল প্রতি ৪ কেজি করে বিনামুল্যে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে ৩৬.৩ মেট্রিক টন লবণ দেয়া হয়েছে। এতে গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছে ৯১৪টি ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছে ৫ হাজার ৫৭০টি। আর এ কারনে চামড়ার দাম অন্যবারের তুলনায় তারা বেশি পাবে।
সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, জেলায় ৩ বছর করোনায় কোন রোগী আক্রান্ত না হওয়ায় ল্যাব বন্ধ হয়ে আছে ও করোনা পরীক্ষা কীটও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া তিনি বর্তমানে ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, সকলকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা বেশি আছে তাদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু মশা দিনের বেলায় কামড়ায় বেশি। এজন্য দিনে-রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই সকলকে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
সভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ওভারপাস তৈরীর কারণে একাডেমী মোড় থেকে টার্মিনালের আগ পর্যন্ত রাস্তার বেহাল অবস্থা হওয়ায় সেখানে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এছাড়া জেলা প্রধান সড়কগুলোতে রাস্তার ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকানীরা ব্যবসা করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়। এছাড়াও মাছপট্টির কাছে গোরস্তানের সামনের রাস্তার কিছু অংশ মেরামতে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।
গ্রাম আদালতের ডিস্ট্রিক ম্যানেজার আসাদুজ্জামান জানান, চলতি বছরের মে মাসে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৯টি মামলার মধ্যে নিষ্পতি হয়েছে ১৪টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩২টি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২২টি মামলা, জীবননগর উপজেলায় ৪২টি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি এবং দামুড়হুদা উপজেলায় ৫৭টি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। এছাড়া হাসাদাহ ইউপিতে ৪০ হাজার টাকা, নাটুদাহ ইউপিতে ৬ হাজার টাকা, মাখালডাঙ্গা ইউপিতে ১০ হাজার টাকা, ভাংবাড়ীয়া ইউপিতে ৩ হাজার ৫শ টাকা, ডাউকী ইউপিতে ৪ হাজার টাকা ও জেহালা ইউপিতে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রশাসক শারমিন আক্তার বলেন, এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। ডেঙ্গু ঢাকা শহরে ভয়াবহ আতংকের নাম। চুয়াডাঙ্গায় এখনও ডেঙ্গুরোগী সনাক্ত হয়নি বা আমাদের নজরে আসেনি। এখন আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দিকে জোর দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা থেকে ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসুচি হাতে নিয়েছি। শহরের সব ড্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে। এরপর স্প্রে করা হবে। যাতে মশার লাভা ধ্বংস হয়ে যায়। আপনাদের বাড়ি অথবা অফিসের সামনে বদ্ধপানি পরিস্কার রাখুন। যাতে ডেঙ্গুবাহীত মশা তৈরী হতে না পারে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোরবাণীর পশুহাটে গরু-ছাগলের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিলো। সেই কারনে কোরবাণীর পশু কিনতে কোন সমস্যা হয়নি। জেলায় এবার ৮৪ হাজার পশু কোরবাণী হয়েছে। কোরবাণী উপযোগী গরু-ছাগল মজুদ ছিলো ১ লাখ ২৪ হাজার। এখনো উদ্বৃক্ত রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার পশু। সারা দেশে উদ্বৃক্ত রয়েছে ৩৩ লাখ পশু। তবে পশু চামড়া দাম নিয়ে কিছুটা সমস্য ছিলো। অনেকেই কাঙ্খিত দামে পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে। তবে নতুন কেউ ভোটার হতে চাইলে সেই কাজ চলমান রয়েছে। সেটা নির্বাচনি তফশিল ঘোষনার আগ পর্যন্ত চলবে। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ৪ উপজেলায় ৪৬ হাজার ৪৭৮ জন নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ১৪ হাজার ৬২৮ জন, আলমডাঙ্গায় ১৩ হাজার ১২৯ জন, দামুড়হুদায় ১১ হাজার ৬৭৩ জন ও জীবননগরে ৭ হাজার ৪৮ জন। মারা যাওয়ার কারনে কর্তন হয়েছে ২০ হাজার ২৫৫ জন ভোটার। পূর্বে মোট ভোটার ছিলো ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৬৯ জন। হালনাগাদ নতুন ভোটার তালিকায় জেলায় মোট ভোটার ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৮ জন, মহিলা ৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৬ জন ও হিজরা ১০ জন। তিনি আরো জানান, চুয়াডাঙ্গার দুটি সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৩৫৪টি। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হলে এখনই জনপ্রতিনিধিদের আবেদন করার আহবান জানান।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ^াস, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহ, জীবননগর নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মহসীন, কৃত্রিম প্রজজনের উপ পরিচালক ডা. শামিমুজ্জামান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাসুদুর রহামান সরকার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অ.দা.) মাকসুরা জান্নাত, পাসর্পোটের উপ-সহকারি পরিচালক এস এম জাকির হোসেন, জেলা সঞ্চয় অফিসার নজরুল ইসলাম, সওজের এসডিই সুজাত আলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার সাহা, টিটিসির অধ্যক্ষ মো. মুছাবেরুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীদ্র কুমার মন্ডলসহ সরকারি সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা সুষ্ঠুভাবে উদযাপিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ, করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্ক থাকার আহ্বান, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
