আলমডাঙ্গা অফিস
মাথায় হাঁড়ি, কাঁধে ঝুলি এই চেনা দৃশ্যটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের মানুষদের কাছে পরিচিত এক নামের সঙ্গে—আব্দুল মালেক (৬৬)। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও প্রতিদিন সকালে কুলফির হাঁড়ি মাথায় নিয়ে জামজামি ইউনিয়নের বাজার, স্কুল, পাড়া-মহল্লা ঘুরে বেড়ান তিনি। প্রায় তিন দশক ধরে নিজ হাতে তৈরি কুলফি বিক্রি করেই সংসার চালা”েছন এই পরিশ্রমী মানুষটি।
চার কন্যার জনক আব্দুল মালেক বলেন, “ভোরেই কুষ্টিয়া থেকে রওনা হই। জামজামির বাজারে আর আশপাশে ঘুরি। হাঁড়ি মাথায় নিয়া হাঁটাই আমার অভ্যাস। এখনো মানুষ ভালোবেসে কুলফি খায়, এটাই বড় আনন্দ।”
এক সময় মাত্র ১, ২ ও ৫ টাকার কুলফি বিক্রি করলেও এখন ২০ থেকে ৭০ টাকা দামের কুলফি বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন আনুমানিক ৩,০০০ থেকে সাড়ে ৩,০০০ টাকার কুলফি বিক্রি করে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।
জামজামি বাজারের পান-আরত ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলম শাহ বলেন, “আব্দুল মালেক শুধু একজন কুলফি বিক্রেতা নন, তিনি আমাদের এলাকার ইতিহাস। ৩০ বছর ধরে মানুষকে খুশি করে যা”েছন। তার মতো একজন পরিশ্রমী মানুষের জন্য সমাজের উচিত সম্মান দেখানো। আমরা যারা ছোট থেকে তাকে দেখছি, জানি—তিনি কতটা সংগ্রামী।”
জামজামি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, “স্কুল ছুটির পর আমরা মালেক চাচার কুলফির জন্য অপেক্ষা করি। তার কুলফির স্বাদ আলাদা, আর উনাকে না দেখলে মনে হয় জামজামিতে কিছু একটা কম।”
বাজারের দোকানদার রানা আহমেদ বলেন, “আমার ছোটবেলা থেকেই উনাকে দেখে আসছি। কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি। মাথায় হাঁড়ি নিয়েই সারাদিন কুলফি বিক্রি করেন। আল্লাহ যেন উনাকে আরও সু¯’ রাখে।”
রোদ-বৃষ্টি-শীত—কোনো কিছুকেই পরোয়া না করে দিনের পর দিন একই নিষ্ঠা আর পরিশ্রম নিয়ে কাজ করে যা”েছন আব্দুল মালেক। তার কুলফিতে যেমন আছে ঘাম, তেমনি আছে জীবনের গল্প, ভালোবাসা ও মানুষের নির্ভরতা।
মাথায় হাঁড়ি নিয়ে ৩০ বছর ধরে কুলফি বিক্রি করছেন জামজামির আব্দুল মালেক
