শেষ মূহুর্তে জমজমাট মেহেরপুরে শতবর্ষী বরাদী ছাগলের হাট ছাগল আছে দেখা নেই ক্রেতার

মেহেরপুর অফিস
ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের হাকডাকে মুখর চারপাশ। চলছে দর কষাকষি। এভাবেই জমে ওঠে মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদীর শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ছাগলের হাট। নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি ছাগল নিয়ে হাট জমজমাট হলেও হাসি নেই বিক্রেতাদের মুখে। হাটে ছাগল আমদানি হলেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা না পাওয়াই তার কারণ। ফলে কপালে এখন চিন্তার ভাজ খামারি ও ব্যবসায়ীদের। বিক্রেতারা বলছেন এবছর প্রচুর ছাগল আমদানী হওয়ায় কাঙ্খিত দাম বলছেন না ক্রেতারা তাই বিক্রি কম। কোরবানির সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মেহেরপুরের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কিনতে ব্যবসায়ীরা ভিড় করে থাকেন এই হাটে। এ জেলায় পশু হাট হিসেবে সর্বপ্রথম বারাদী ছাগলের হাট প্রতিষ্ঠিত হয়। যার বয়স শত বছর পেরিয়ে গেলেও এই হাটের কদর একবিন্দুও কমেনি
এ হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, বছরজুড়েই সপ্তাহের শনি ও বুধবার ক্রেতা বিক্রেতায় ভরপুর থাকে হাটটি। প্রতি বছর এসময়ে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কিনতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিরা ভিড় করেন। শুধু ব্লাকবেঙ্গলই না, এবার হাটে উঠেছে রাম ছাগল ও যমুনা পাড়ি জাতের বড় বড় ছাগল। তবে মাঝারি ধরনের ছাগলের চাহিদাও কম নয়। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। গত বছরগুলোতে যেভাবে চলেছে তার তুলনায় বেচাকেনা খুবই কম। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন ঐতিহ্যবাহী বারাদী ছাগলের হাটে। ট্রাক বোঝায় করে কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ছাগল বিক্রেতা মনিরুজ্জামান বলেন, দুটি ছাগল বিক্রি করেছি ৮১ হাজার টাকা। বাজার এবছরে খুব একটা ভালো না। এবছর ছাগলের চাপ বেশি। দেশের পরিস্থিতির কারণে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। গত বছরগুলোতে যেভাবে চলেছে তার তুলনায় বেচাকেনা কম। বিক্রেতা আনারুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখনও বিক্রি করতে পারিনি। কেউ দামই জিজ্ঞাসা করছে না। হাটে একেবারেই ক্রেতা কম। আমার ছাগলের দাম দিয়েছি ৪০ হাজার কিন্তু এখানে দাম বলছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার। ছয় মাস আগেই গ্রামে এই ছাগলের দাম উঠেছিল ৩০ হাজার। তখন বিক্রি করলেই ভালো হতো।
ঢাকা থেকে আসা ছাগল ব্যবসায়ী সাহারুল ইসলাম বলেন, কোরবানির সময় এ অঞ্চলের হাটে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়। আমরাও এখানে আসি ছাগল কিনতে। এখানে সারা বছরই ছাগল পাওয়া যায়। তবে ঈদের আগে ভালোমানের ছাগলের সমারোহ থাকে। বড় জাতের ছাগলের চাহিদা বেশি ঢাকাতে। আমি যেগুলো কিনেছি সেগুলো যাত্রাবাড়ী হাটে তোলা হবে।
হাটের ইজারাদার সোহেল রানা বলেন, বারাদি বাজারে ছাগলের হাট একটি ঐতিহ্যবাহী ছাগলের হাট। প্রতি শনি ও বুধবার এখানে ছাগলের হাট বসে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়েছে। বেচাকেনা অনেক সন্তষজনক। প্রতি হাটে ৪০-৫০ লাখ টাকার ছাগল বেচাকেনা হয়। তিনি আরও বলেন, বাহির থেকে আগত ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওজন পরিমাপক যন্ত্র এবং ভেটেনারী মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে এবং জাল টাকা সনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন দিন আলাদা আলাদ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: সুব্রত কুমার ব্যার্নাজী জানান, মেহেরপুরে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার গবাদি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মেহেরপুরের চাহিদা ১ লাখ। অতিরিক্ত পশু দেশের বিভন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে যাবে। পশু সম্পদ বিভাগ আশা করছে খামারিরা গবাদি পশু বিক্রি করে লাভবান হবে এবার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *