দরজায় কড়া নাড়ছে কুরবানির ঈদ টুংটাং শব্দে মুখরিত জীবননগরের কামার পাড়া গুলো

উথলী প্রতিনিধি
দরজায় কড়া নাড়ছে কুরবানির ঈদ। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত করার জন্য ছুরি, বটি দা, চাপাতি, ডাঁসা-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি ও পুরাতনগুলো ঘষামাজার কাজ সেরে নিচ্ছেন সবাই। এ কাজে ব্যাস্ততা বেড়েছে জীবননগর উপজেলার কামারশিল্পের শ্রমিকদের। সেই সাথে বেড়েছে তাদের আয় রোজগারও।
লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে লাল টকটকে করে পিটিয়ে-পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব জিনিসপত্র। আর লোহা পেটাতে গিয়ে টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে পড়ছে কামারপাড়া।উপজেলার সীমান্ত, হাসাদাহ, বাঁকা, আন্দুলবাড়ীয়া,মনোহরপুর, উথলী এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়েছে।
উপজেলার উথলী গ্রামের কামারপাড়ায় ঢুকতেই কামারদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। কামারশালার টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশ।উপজেলার উথলী গ্রামের ঈশ্বর নরেন্দ্রনাথ কর্মকারের ছেলে শ্রী অনীল কুমার কর্মকার উপজেলার বেশ সুপরিচিত একজন কামার। তিনি তার বাবার হাত ধরে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই কামার শিল্পের সথে জড়িত রয়েছেন। এখন তার একমাত্র ছেলে শ্রী অমল কুমার কর্মকারকে সাথে নিয়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারাবছরেই তারা এই কাজ করে থাকেন। তবে কোরবানির ঈদ আসলেই দা, বটি, ছুরি, ডাঁসা তৈরি ও পুরাতন জিনিষ ঘষামাজার কাজের চাপ পড়ে যায়। কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকায় নতুন করে আর কাজের অর্ডার নিচ্ছেন না।
নতুন জিনিসপত্র তৈরির খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান লোহার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এক কেজি ওজনের লোহার একটি দা বা বটি তৈরি করতে দেড় হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ছুরি তৈরি করতে ছুরির সাইজ অনুযায়ী টাকা নেয়া হয়ে থাকে। পুরাতন জিনিসপত্র ঘষামাজা করতে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। অনীল কামারের মতো কামারপাড়ায় অন্য কামররাও এখন এই কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। জীবননগরের কামার পাড়া গুলো ঘুরে দেখা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, দা ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামার শিল্পীরা বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা বলেন- ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুদিন আগে থেকে রাত-দিন বেচাকেনা হবে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৪শ’ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন ৮শ’ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে চাপাতি, ছুরি ও দার দাম একটু বেশি নিচ্ছেন। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কামারদের ব্যাস্ততা অনেক বেড়েছে। ভোর থেকে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত কামারশালার টুংটাং শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। তবে কোরবানির ঈদের পর এদের ব্যস্ততা অনেকটাই কমে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *