রাকিবুজ্জামান, জীবননগর
জীবননগরে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রতিবছর এ উপজেলায় ক্ষতিকর তামাকের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্যাবাকো কোম্পানির লোভনীয় ফাঁদে পড়ে খাদ্যজাত ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় উপজেলার হতদরিদ্র কৃষকরা তাদের কৃষি জমিতে এই চাষের সম্প্রসারণ করছে।
কৃষিখাতে তামাক চাষের ফলে তিনফসলী জমির ফসল উৎপাদনের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, খাদ্যজাত ফসল উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা পূরনেও ব্যাপকভাবে এর প্রভাব পড়ছে। তবে কৃষি ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের লাভজনক ফসল ধান খাদ্যজাত ফসল আবাদের পরামর্শ দিলেও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় এ চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। ক্ষতিকর তামাক চাষের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতে ব্রিটিশ ট্যাবাকো, জাপান ট্যাবাকো, আবুল খায়েরসহ একাধিক কোম্পানি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে তামাক চাষে বীজ সারসহ নানা উপকরণ ক্রয়ে বিনা সুদে লোন দিয়ে তামাকের চাষ করিয়ে থাকে। এছাড়া কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করানো হয় অন্যান্য ফসলের তুলনায় তামাকের মূল্য বেশী এবং এ চাষে কৃষককে তেমন কোনো টাকা খরচ করতে হয়না। যার কারনে এই এলাকার চাষীরা এই চাষ করতে আরও আগ্রহী হচ্ছে বলে জানা গেছে। জীবননগর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শুধু তামাকের আবাদ চোখে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা বললে তিনি আজকের চুয়াডাঙ্গা পত্রিকার প্রতিনিধি রাকিবুজ্জামান কে জানান তামাক চাষ ক্ষতিকর জেনেও ট্যাবাকো কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ করে তারা এ বছর দুঃচিন্তায় রয়েছেন। কোম্পানিগুলো তামাক চাষের পূর্বে খোঁজখবর নিলেও এখন তামাক চাষ প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখন তামাক ক্রয় করতে গড়িমসি করছে তারা ।ফলে একপ্রকারে কমদামে তামাক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা আরও অভিযোগ করে বলেন- জীবননগরে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যাবাকো কোম্পানি তামাক চাষের আগে লোভনীয় মূল্যের কথা বলে কৃষকদের দিয়ে তামাকের চাষ করানো হয়। শুধু তাই নয় তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের শ্রেণিবিন্যাশের নামে বছরের পর বছর মূল্য নির্ধারণে ঠকিয়ে আসছে। এবিষয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিরা কোনো কথা বলতেও চায়নি।
বেনীপুর গ্রামের তামাক চাষী আবু তালেব ও কৃষক নুর ইসলাম বলেন তামাক চাষ ক্ষতিকর এবং তামাক প্রস্তুত করতে গেলে শরীরে নানা রোগের বাসা বাধে পাশাপাশি কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাসসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। বসতঘরে তামাক সংরক্ষণ করতে গিয়ে নারী শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা তামাকের সংস্পর্শে এসে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
তার পরেও অন্যান্য ফসলের তুলনায় একটু বেশী লাভের আশায় তামাকের আবাদ করে থাকি। তবে কৃষকদের দ্বারা তামাকের আবাদ করিয়ে নিয়ে কোম্পানিগুলো লাহবান হলেও সঠিক মূল্য না দেওয়ায় চাষীরা তেমন লাভবান হচ্ছে না।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান এবছর চলতি মৌসুমে জীবননগর উপজেলা সহ চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩১০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন তামাক চাষে কৃষকদেরকে সবসময় নিরুৎসাহিত করা হলেও তারা তামাক চাষ করে। এছাড়াও তিনি বলেন, তামাক চাষে যেমন কৃষিজমির ক্ষতি হয়। তাই তামাক চাষের পরিবর্তে মাঠপর্যায়ে অধিক লাভজনক ভুট্টা,ফল ও সবজির আবাদ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর ক্ষতিকর তামাক নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ধুমপানের মুল বস্তুু তৈরির উপাদান হলো তামাক। তাছাড়া তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের যে সকল স্বাস্থ্য বিধি আমাদের মেনে চলা দরকার, সেগুলি গ্রাম পর্যায়ে মানা হয় না। যার কারনে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবসময় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।
উল্লেখ্য জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে চুয়াডাঙ্গায় গত মৌসুমে ২৮০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হলেও চলতি বছর আরো ৩০ হেক্টর জমিতে তামাকে আবাদ বেড়েছে। জেলায় মোট ৩শত ১০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে এবং তামাক উৎপাদন হয়েছে ৭৭৫ মেট্রিক টন।