জীবননগরের হাসাদাহে আঙ্গুর চাষে দুই ভায়ের বাজিমাত আঙ্গুর বাগান দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়


হাসান নিলয়, উথলী প্রতিনিধি:
জীবননগরের হাসাদাহে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েচে আঙ্গুরের চাষ। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আঙ্গুর বাগানের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরজমিনে আঙ্গুরের বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীরা বলছেন আঙ্গুর ধরার এমন সুন্দর দৃশ্য এর আগে আর কোথাও দেখেনি। করোনা ভাইরাসের সময় ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ শুরু করে জীবননগর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা দু’ভাই আশরাফুল ইসলাম (৩৮) এবং তরিকুল ইসলাম (৩৫)। কৃষি উদ্যোক্তা দু’ভাই এক বছর আগে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চাষ করেন এ বিদেশি ফল আঙ্গুরের। চারা রোপণের এক বছর পর প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে এবং এক মাস পর বাজারজাতকরণ শুরু হবে। ভিটামিন সমৃদ্ধ আমদানি নির্ভর একটি ফল আঙুর।
জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ গ্রামে ভূষিপাড়া মাঠে পাশাপাশি দুটি জমিতে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেছেন হাসাদাহ গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা দু’ভাই আশরাফুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম। সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে তিনি পার্পেল ও বাইকুনুর জাতের ৭৫০টি চারা রোপণ করেছেন। ইতোমধ্যে বাঁশের মাচায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সবুজ রঙের আঙ্গুর। তবে আঙুর এখনো পরিপক্ক হয়নি। আরও এক মাস পর আঙ্গুর পরিপক্ক হবে। তখন আঙ্গুরের সবুজ রং পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যাবে। খেতে হবে রসালো মিষ্টি।


সরজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ফলে ভরে গেছে গোটা আঙ্গুর বাগান। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগানটির কথা ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ কারণে আঙ্গুর বাগান দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতশত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বাগানটিতে।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ৩৮ বিঘা জমিতে আমাদের ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারাসহ লেবুর বাগান রয়েছে। ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন ফলের চাষ করে আসছি। আমরা চাই সব সময় নতুন নতুন ফলের চাষ করতে। এ জন্য এক বছর আগে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আঙ্গুরের বাগান করেছি। এ বছর আরো ১০ বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষের পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, দু’বছর আগে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু গাছ লাগিয়েছিলাম। ফল মিষ্টি হওয়ায় এক বছর আগে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর বাগান করেছি। এবার গাছে অনেক আঙুর ধরেছে। বাগানে ৭৫০টির মতো গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০/১৫ কেজি করে আঙুর হারভেস্ট করতে পারব বলে আশা করছি। এ পর্যন্ত সাড়ে তিন বিঘা আঙুর বাগানে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি প্রায় ২০ লাখ টাকার আঙুর বিক্রি করতে পারব।
তিনি বলেন, দেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর বিদেশ থেকে আঙুর আমদানি করতে হয়। আঙুর চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে। বাগান দর্শনার্থী ঝিনাইদহ শহরের সবুর খান বলেন, ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এ বাগানের সফলতার গল্প শুনেছি। সেই আগ্রহ থেকেই বাগানটি দেখতে এসেছি। চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন সফলতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জীবননগরের মাটি আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী। জীবননগর উপজেলায় চলতি বছরে ৩০ বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আশরাফুল ইসলামের বাগানে সবচেয়ে বেশি ফল এসেছে। আশরাফুল ও তরিকুল ইসলামের সাড়ে তিন বিঘা জমিতে যেভাবে আঙ্গুরে ফলন এসেছে এতে তারা লাভবান হবে বলে আশা করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *