কুতুবপুর প্রতিনিধি
ভরা মৌসুম মানেই কৃষকের মাঠমুখী ব্যস্ততা। তবে চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নে প্রতি বছরই এ সময়ে দেখা দেয় সারের সঙ্কট। চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না থাকায় কৃষককে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হয়। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এ সঙ্কটের জন্য সরকারের অপ্রতুল বরাদ্দকেই দায়ী করছেন। গতকাল সরোজগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায় সার নেওয়ার জন্য কৃষকদের লম্বা লাইন। এক পর্যায়ে কৃষকদের সাথে ডিলারের উচ্চ বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ও ঘটে।
সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া এক হাজার ৩৫০টাকা, ডিএপি এক হাজার ৫০ টাকা , টিএসপি এক হাজার ৩৫০টাকা ও পটাশ এক হাজার টাকা হলেও বাজারে এই দামে সার মেলে না। বিশেষত টিএসপি সারের ঘাটতি প্রকট, অথচ এই সার ব্যবহারেই উৎপাদন ভালো হয়। কৃষি বিভাগ ডিএপি ব্যবহারে উৎসাহ দিলেও কৃষকের আস্থা কম।কুতুবপুর ইউনিয়নে ভুট্টা আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ -এ(৭০০+৬০০+৩৫০) =১৬৫০ হে :। হেক্টর প্রতি ফলন লক্ষ্যমাত্রা ১২ মে: টন। মোট ফলন লক্ষ্যমাত্রা ১৬৫০দ্ধ ১২=১৯৮০০ মে: টন। এর সাথে চলবে ইরি ধান এবং তামাকের চাষ। কিন্তু চাষ অনুযায়ী ইউনিয়নে সারের বরাদ্দ কম। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত কম সরবরাহে মৌসুমের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এতে হয় কৃষককে জমির পরিমাণ কমাতে হবে, নয়তো বাজারে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হবে।
কার্তিক মাসের শেষ থেকে ভুট্টা, তামাক ও ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হয়। প্রান্তিক কৃষকের জন্য এ সময়টাই বছরের প্রধান আয়ের সুযোগ। গত মৌসুমে এক বস্তা টিএসপি দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, এবারো যদি পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হয়, তাহলে একই পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই আমরা এখন থেকে সার সংগ্রহ করছি তবে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছি না।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ‘আমাদের জমি বাঁচাতে হলে সময়মতো পর্যাপ্ত সার দিতে হবে। না হলে উৎপাদন কমবে, আবার সার কিনতে গিয়ে লোকসানও হবে।’ বিএডিসি ডিলার সার ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, সরকারের বরাদ্দই মূলত অপ্রতুল। এ জন্য কৃষকদের একটু কষ্ট করতে হয় আমরা ডিলার তো বরাদ্দের সার মাথাপিছু ভাগ করেই দিচ্ছি।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কৃষককে সঠিক সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। টিএসপির বিকল্প হিসেবে ডিএপি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে অ্যাপস ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে, জৈব সার ব্যবহারের জন্য তাগিদ দিচ্ছি এছাড়াও কৃষকগণ যেন সুষম মাত্রায় জমিতে সার প্রয়োগ করে এবিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।
সব মিলিয়ে, মৌসুম শুরুর আগেই বাজারে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে কৃষকের আতঙ্ক আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সঙ্কটের সুযোগে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরাই।