স্টাফ রিপোর্টার
২০০১ সালে মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা টানা চতুর্থবারের মতো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় জেলার শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। একটি চালাঘরের স্বপ্ন আজ পরিণত হয়েছে হাজারো আলোর মশাল হয়ে। ধারাবাহিকভাবে জিপিএ-৫ ও জাতীয় মেধা তালিকায় ¯’ান পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করছে- একজন মানুষের স্বপ্ন, দায়বদ্ধতা ও নেতৃত্ব কীভাবে একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে। প্রয়াত হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত করেছেন তার সন্তান আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক।
আবারও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর ৪৮তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় জেলা পর্যায়ে সর্বো”চ মেধাস্থ’ান অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা (হাজী শাসসুজ্জোহা জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা)। ১৪৪৬ হিজরি/২০২৫-ঈসাব্দ শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ মেধাস্থান অর্জন করায় খুলনা বিভাগীয় কওমী মাদ্রাসা পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা থেকে বিশেষ সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ বার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধাস্থান অর্জন করল মাদ্রাসাটি।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা দৌলতদিয়াড় মারকায মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগীয় কওমী মাদ্রাসা পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সম্মেলনে পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসাকে চতুর্থ বারের মতো বিশেষ সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। খুলনা বিভাগীয় কওমী মাদ্রাসা পরিষদের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কওমী মাদ্রাসা পরিষদের মহাসচিব মাওলানা নাসিরুল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কওমী মাদ্রাসা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি গোলামুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা উলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি জুনাইদ আল হাবীবী ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুস্তাফা কামাল কাসেমী। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। অতিথিরা বিশেষ সম্মাননা সনদ ও মুমতায (জিপিএ-৫) প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার পক্ষে বিশেষ সম্মাননা সনদ গ্রহণ করেন মাদ্রাসার মুহতামিম শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি আব্দুল কাদের ও নায়েবে মুহতামিম আলহাজ্ব হাফেজ ইনারুল ইসলাম (ইন্না)।
১৪৪৬-হিজরি/২০২৫-ঈসাব্দ শিক্ষাবর্ষের ৪৮তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মাদ্রাসার মোট ২০ জন শিক্ষার্থী মুমতাজ (জিপিএ-৫) পেয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশের মধ্যে মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ইবতিদাইয়্যাহ শ্রেণির ৬ জন শিক্ষার্থী। মেধাতালিকায় ৩৬তম স্থান অর্জন করেছে শামীম আহমেদ, ৫০তম আবু সাদিব, ৫৫তম রিফাত আলী ও ৬০তম যৌথভাবে সাব্বির হোসেন ও ইব্রাহিম হোসেন এবং ৭০তম তাজিবুল ইসলাম। এছাড়া মুতাওয়াসসিতাহ শ্রেণি থেকে ৭ জন, ইবতিদ্যাইয়াহ শ্রেণির ৪ জন ও হিফজুল কোরআন বিভাগ থেকে ৩ জনসহ আরও ১৪ জন শিক্ষার্থী মুমতাজ (জিপিএ-৫) প্রাপ্ত হয়েছে।
এদিকে, জেলা পর্যায়ের টানা চতুর্থবার সর্বোচ্চ মেধাস্থান অর্জন করায় ‘হাজী শাসসুজ্জোহা জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা’র সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দোয়া করেছেন মাদ্রাসার পরিচালক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মুস্তাফিজুর রহমান শামীম।
আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘এই অর্জন শুধুই আমাদের মাদ্রাসার নয়, এটি চুয়াডাঙ্গা জেলার সম্মিলিত গর্ব। আমি কৃতজ্ঞ আমার পিতা মরহুম হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের প্রতি, যাঁর হাতে এই দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বীজ রোপিত হয়েছিল। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শই আমাদের পথচলার প্রেরণা। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যতদিন আল্লাহ জীবন দিয়েছেন- এই মাদ্রাসার প্রতিটি ছাত্র যেন দীন ও দুনিয়া উভয় জগতে আলোকিত হতে পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। যারা আমাদের পাশে ছিলেন, আছেন, থাকবেন-সবাইকে আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা জানাই।’
প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুরস্থ’ বাংলাদেশ বিজনেস অব চেম্বারের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট, সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ও হোটেল সাহিদ প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক, এক সময়ের সাংবাদিক ও বর্তমান বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান আরিফ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রকাশক-সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফের পিতা মরহুম হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাস একটি সুন্দর দ্বীনি-শিক্ষার ভাবনা নিয়ে ২০০১ সালে মাত্র ১৩ জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক নিয়ে একটি চালা-ঘরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামে ‘পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম কওমিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা’ নামে দ্বীনি-শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের মৃত্যুর পর এই মাদ্রাসাটির পরিচালকের দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ও দানবীর হিসেবে খ্যাত আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। একজন সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পিতার সুস্বপ্নকে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মেধা ও শ্রম দিয়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
মাদ্রাসাটি পরিচালনার জন্য সাহিদুজ্জামান টরিক চুয়াডাঙ্গায় তিন তারকা মানের হোটেল সাহিদ প্যালেস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করেছেন। সেখানে থেকে আয়কৃত সম্পূর্ণ অর্থ এ মাদ্রাসা কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসাটিতে ছাত্রদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিং-এর ব্যব¯’া করা হয়। যেখানে তিন বেলা মাদ্রাসার সকল ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।