জিকে সেচ প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজ এবং উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে অবস্থিত পানি প্রত্যাহার প্রকল্পের মাধ্যমে মাএাতিরিক্ত পানি প্রত্যাহার করার ফলে বাংলাদেশের নিম্নপ্রবাহ অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। সরাসরি ক্ষতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি হচ্ছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর জেলার ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর ব্যাপী গঙ্গা – কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প( জিকে প্রকল্প)। মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের অপেক্ষা শুস্ক মৃতপ্রায়  ব-দ্বীপ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে চালু হওয়ার পর হতে নেটওয়ার্ক ভিত্তিক পরিকল্পিত সেচের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া -যশোর এলাকার কৃষি ও পরিবেশের উন্নয়নে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তুু ১৯৯১ সালের পর হতে ভারত শুষ্ক মৌসুমে একতরফা ভাবে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করতে শুরু করলে প্রকল্প এলাকার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস, পৃষ্ঠীয় পানি দূষণ, জলজ প্রজাতি ও মৎস সম্পদ বিলুপ্তি এবং মৎসের অভিগমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভূ অভ্যন্তরস্থ পানি স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় টিউবয়েল সমূহে আর্সেনিকের মাএা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ এলাকা হ্রাস পেয়েছে। ফলে ভূমি ব্যবহার ও শস্যের ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। অপর্যাপ্ত সেচ সরবরাহের জন্য শস্য পুনজির পরিবর্তন হয়েছে।

জিকে প্রকল্প এলাকায় নেটওয়ার্ক ভিত্তিক সেচখাল ও সুইচ গেট থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে এবং ইহার ফলে ছোট ছোট নদী, বিল ও খাল পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। গঙ্গা নদী প্রবাহ ও নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার প্রভাব হিসাবে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মৃত্তিকার আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া হিসেবে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পেতে পারে এবং প্রকল্পের দক্ষিনাঞ্চলের লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।  তাছাড়া অএ এলাকার কৃষি পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি গবেষণার মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে স্বল্প সেচে আবাদ উপযোগী ফসল উদ্ভাবনের চেষ্টা করা প্রয়োজন। জলাভূমি গুলোর জীববৈচিত্র পুন:ধবংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রকল্পের উপকার ভোগীদের অংশগ্রহণে সুস্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারত সরকারের সাথে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি পুন মূল্যায়নের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। অপর দিকে জি-কে এলাকায় মরা নদী ও খাড়ি গুলিতে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় অভ্যন্তরীণ নদী সমূহের আন্ত: সংযোগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে পানি সমস্যা মোকাবেলা ও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

লেখক

ড. মো: মহবুব আলম,

সহকারি অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

আলমডাংগা সরকারি কলেজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *