ঝিনাইদহ অফিস
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা’ই ভরা একটি গ্রাম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই এই গ্রামে, অথচ আধুনিকতার ছোঁয়া নেই গ্রামটিতে। এই গ্রামে মাসের পার মাস কোনো উৎসব দেখা যায় না, হয় না কোনো বিয়ে, আসে না কোনো বর যাত্রী। শিক্ষার্থী ও রোগীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে চলাচলে কষ্ট পোহাতে হয় এ অঞ্চলের মানুষকে। বৃষ্টির পানি জমে বেহাল অবস্থা সড়কটির। কাদাযুক্ত ছোট বড় গর্তে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়েই অতিকষ্টে যাতায়াত করছে ঝিনাইদহ জেলার ২নং মধুহাটী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যাদবপুর গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই থেমে যায় যায় তাদের দৈনিন্দ্য জীবনের কর্মব্যস্ততা। বেহাল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার মানুষদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চান না অন্য এলাকার বাসিন্দারা। বর্তমান টানা বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় দুই মাস ধরে গ্রামবাসী ঘরবন্ধী অবস্থায় দিন পার করছেন।
স্কুল-কলেজে যাওয়া’তো দূরে থাক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। কোথাও বের হলেই অনেক সময় হোঁচট খেয়ে মারাত্মক যখমের শিকার হচ্ছেন তারা। শিশু থেকে বয়স্ক সকল বয়েসের মানুষের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ ব্যাধি। এ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না গবাদিপশুরাও, সঠিক সময়ে খাবারের অভাবে রোগাক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের গবাদিপশুগুলো।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি যাদবপুর গ্রামবাসী। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় ভরে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এই গ্রামের রাস্তা। বর্তমান সময়ে বছরের পর বছর কাদা পানি ভেঙে বেচে থাকার তাগিদে সংগ্রাম করে যাচ্ছে এই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয় না এই রাস্তার কারণে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরে যায় শুধু এই রাস্তার জন্য। আমি এখন ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। এই রাস্তা দিয়ে একজন রোগী কীভাবে বাড়ি যাবে আপনারাই বলেন? আমাদের চলাচলে বহু কষ্ট এই রাস্তাটি দিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন সরকার ক্ষমতাই আসার পরেও, গ্রামের এই রাস্তা সংস্কারের কথা থাকলেও নির্বাচনের পরে সবকিছুই ভুলে যান নেতাকর্মীরা, যার ফলে যোগাযোগ ব্যাবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসী। এতে রিক্সা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ কোনো যানবাহন এই গ্রামে যাতায়াত করতে পারে না। কেও অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরমুখী হতে গেলে গ্রামের সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়াও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ক্লাসসহ বিভিন্ন পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষা ব্যাবস্থা।
স্থানীয়রা আরো বলেন- দীর্ঘ প্রায় ৫ কিলোমিটার এই রাস্তটি পাকা হলে যাদবপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহজ হবে। আশে পাশের সকল গ্রামের মানুষ এই রাস্তাটি ব্যাবহার করে তাড়াতাড়ি শহর মুখি হতে পারবে সেই সাথে রাস্তার পাশে থাকা আবাদি জমিগুলোর দাম বৃদ্ধি পাবে। কেও অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সহজেই হাসপাতালে নেওয়া যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ বিশ্বাস বলেন, আমার আয়ের মূল উৎস কৃষি কাজ, আমি কৃষি কাজ করে আমার পরিবারের সকল চাহিদা মিটিয়ে থাকি। কিন্তু প্রতি বছর হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষি জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, যার ফলে বছরের প্রায় চার থেকে পাচ মাস জমিতে কোনো চাষাবাদ করা যায় না। যাতায়াত ব্যাবস্থা না থাকায় সঠিক সময়ে চাষ করা ফসল বিক্রয়ের জন্য বাজারে নেওয়া সম্ভব হয় না, এজন্য বেশিরভাগ ফসল ঘরেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকি আমরা।
স্থানীয় আরো এক বাসিন্দা ফারুক বিশ্বাস “আজকের খবর’কে” বলেন, রাস্তার এমন অবস্থা হয়েছে যে, এলাকায় কোনো গর্ভবতী নারীদের যদি ডেলিভারি টাইম অথবা ইমার্জেন্সি পেইন ওঠে তাহলে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো ব্যাবস্থা পাওয়া যায় না। এমনকি রাস্তার কারনে ছেলে-মেয়ের বিয়েও ঠিকঠাক হয় না, কারণ কেও এই গ্রামে আসতে চায় না।
মধুহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে, অনেক সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না, এ ছাড়াও বর্ষাকালে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায় না।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মানোয়ার উদ্দিন বলেন, পূর্বের তালিকা অনুযায়ী এই সড়কের কোনো লিস্ট আমাদের কাছে ছিলো না। ইতিমধ্যে এই কাঁচা রাস্তাটির ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি। এ সম্পর্কে জানা মাত্রই মাঠ পর্যায়ে আমরা পরিদর্শন করেছি। (২৪৪১৯৫৩৫৫ ঔধফঁনঢ়ঁৎ ইঈ জড়ধফ-গড়ফযঁযধঃর ারধ ঠরশধৎ সড়ৎব জড়ধফথ৫শস) বর্তমানে যশোর প্রকল্পের একটি তালিকা করা হয়েছে, সেই প্রকল্পে আমরা আপাতত এই গ্রামের ২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য আবেদন করেছি। এই প্রকল্পের বাজেট আসলেই আমরা দ্রুত কাজ শুরু করবো এবং গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে আরো জানান তিনি।