জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত এক অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও খাইরুল ইসলাম

মেহেরপুর অফিস

অভাব, অনাহার আর একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত এক অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়ালেন মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম। মানবিক সহায়তা, খাবার প্রদান এবং চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক সহানুভূতির হাত বাড়ানোও।

সংবাদকর্মীরা বিষয়টি ইউএনও খাইরুল ইসলামকে জানালে তিনি নিজে সরেজমিনে গিয়ে ওই মায়ের খোঁজখবর নেন। তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্যসামগ্রী, নগদ সহায়তা করেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে বৃদ্ধার জন্য সরকারি সুবিধা ও ঘরের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভার পুলিশ লাইন পাড়ার মদিনা খাতুন (৬৪) একমাত্র ছেলেই ছিল তার বেঁচে থাকার ভরসা। অভাবের সংসারে কখনো কারো কাছে হাত পাততে দেয়নি ছেলে। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সেই ছেলে মারা যাওয়ায় এখন মা মদিনা খাতুন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অসহায় হয়ে পেটের দায়ে ঘুরছে এ পাড়ায় ও পাড়ায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণে এক বেলা খাবার জোগাড় করাই যেন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ছেলে হারানোর ব্যথা, অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের মুখে এক বেলা খাবার জোগাড় করার চিন্তায় দিশেহার মদিনা খাতুন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে শহরের পুলিশ লাইন পাড়ায় খাস জমির উপর অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে তিনি ও তার ছেলের পরিবার। কিন্তু বাস্তবতার কি নির্মম পরিহাস তিন বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ছেলে কেরামত আলী। এখন ছেলের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম আর তার বড় মেয়ে ও তার ৯ বছর বয়সী নাতনী নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে ৪টি পেট চালানোই যেন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পাড়া ও পাড়ায় ঘুরে ঘুরে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন। এই বয়সেও কখনো কখনো মাঠেও কাজ করতে হয় তাকে ও তার ছেলের স্ত্রী আম্বিয়া বেগমকে।

বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে আসলে সদর উপজেলা ইউএনওকে অবগত করলে তিনি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান তাৎক্ষণিক মদিনা খাতুনের বাড়ি পরিদর্শন করেন। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা করেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে বৃদ্ধার জন্য সরকারি সুবিধা, ঘর ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তিনি। এলাকাবাসী ইউএনও’র এ মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি এমনভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাহলে সমাজে কেউ একা থাকবে না।

শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ বলেন, সমাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। পরিবার থেকে আবেদন করা হলে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং পরিবারটিকে সচ্ছল করতে বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আজ এই মায়ের বাড়িতে এসে যা দেখলাম তা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা সর্বদা এই মায়ের পাশে থাকতে চাই। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু উন্নয়ন নয়, একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের বড় অর্জন। আমরা চেষ্টা করছি এই মায়ের পাশে থাকতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *