পুষ্পমাল্য অর্পণ, র‌্যালি ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ‘চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস’ পালিত

স্টাফ রিপোর্টার
নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস ২০২৫’ উদযাপন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে পালন করা হয়েছে এ দিবসটি। গতকাল শনিবার সকাল ৭ টায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পরে সকাল সাড়ে নয়টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বি. এম. তারিক-উজ-জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন,  আমরা প্রত্যেকে পরাধীন ছিলাম দীর্ঘকাল। এই পরাধীনতার শিকল থেকে বের হতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক লড়াই সংগ্রাম করেছে। আমরা তাদের শুধু নামেই জানি, চোখেও কখনো দেখিনি। তবে তাদের অবদান এই দেশে অপরিহার্য । ৪৭ এ যেমন এটা রূপ পেয়েছে, ৭১ এ যেমন একটা রূপ পেয়েছে , তেমনই ২৪শে ও একটা নতুন রূপ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যখন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে ঠিক তখনই এমন আন্দোলন হয়েছে। তবে আমরা চাই এমন খারাপ সময় যেন আর না আসে, এমন আন্দোলনেরও যেন আর প্রয়োজন না হয়। ৭১ এ আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা যুদ্ধ করেছিলো তারা হয়তো কখনো ভাবেনি নব্বই এ এসে আবার স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলন  হবে এবং অনেক মানুষ মারা যাবে। ঠিক তেমন ই ২৪ এ এসে এত বড় আন্দোলন হবে কেউ ই ভাবেনি। বলা যায়না ভবিষ্যতে এমন আন্দোলন আবার না হয়। আমরা যুগে যুগে রক্ত দিয়েছি। এটার ইতিহাস জানা খুব প্রয়োজন।
এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান।  তিনি বলেন,  ‘আজকে আমাদের খুব আনন্দের দিন, সামনে বিজয় দিবস আসছে। আজকে চুয়াডাঙ্গায় বিজয় দিবস ৭ ডিসেস্বর। ৬ ডিসেম্বর ছিলো মেহেরপুর এবং ৮ তারিখে কুষ্টিয়ায় বিজয় দিবস পালিত হবে। আজকে আমরা আনন্দিত কারন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা একটু পিছনে ফিরে যাই যুদ্ধের স্মৃতিচারণে। আমার এখনো মনে আছে, হানাদারেরা আমাদের ওপর কিভাবে ঝাপিয়ে পড়তো,  কতটা নির্যাতন করতো। এখনকার ছেলেমেয়েরা ঐ রূপ দেখলে ভয় পেতো, এতটা ভয়ংকর ছিলো ওরা। আমি তখন ছাত্র, দাড়ি গোফ ও উঠিনি। আমি দেখেছি তারা এমনভাবে গুলি বর্ষন করতো রেল লাইন ফুটো হয়ে যেতো, রাস্তায় পশুপাখি মরে পড়ে থাকতো। তিনি আরো বলেন, একবার আমাদের ওপর হামলা হয়। তখন ওরা শুয়ে শুয়ে আমাদের ওপর গুলি করতে শুরু করে। ওরা গুলি শরীরে মারে না মারে পায়ে কারন পায়ে মারলে আর দৌড়াতে পারবো না। তখন ওরা খুচিয়ে খুচিয়ে মারবে বল্লম দিয়ে চাকু দিয়ে কাটবে। আমরাও পাল্টা গুলি করি। ঐদিন ভেবে নিয়েছিলাম আজ ই শেষ দিন। তবে সাহস আর বুদ্ধির জোরে বেচে ফিরেছিলাম আমরা। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে আমাদের সাথে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেছউদ্দিন, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান,  শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজেরে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মায়েশা মালেহা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও রোভার সদস্য কামাল হোসেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, সহকারী কমিশনার এস এম আব্দুর রউফ শিবলু, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুন্সি আবু সাইফ, ওয়ারিয়স অব জুলাইয়ের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, জুলাই যোদ্ধা হাসনা জাহান খুশবু বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা, জুলাই যোদ্ধা, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *