দর্শনা অফিস
৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত কেরু চিনিকলের ২০২৫-২০২৬ আখ মাড়াই মৌসুমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে মিলের কেইন ক্যারিয়ারে আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন কেরু জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ সামসুজ্জোহা।
মাড়াই মৌসুমের উদ্ধোধন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের বিভিন্ন চিনিকলে উৎপাদিত চিনি গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের উৎপাদিত চিনি গুদামে মজুত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাইরের দেশ থেকে চিনি আমদানি করা হবে না। এতে আমাদের কৃষক ভাইদের সহায়তা হবে। এ ছাড়া অস্থায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। চলমান মাড়াই মৌসুম সফল হবে বলে আমি আশাবাদী। আখচাষিদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে আখের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে যেখানে ১০০ কেজি আখের দাম ৬০০ টাকা ছিল, সেখানে বাড়িয়ে ৬২০ টাকা করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ৫৮৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার বন্ধ করে দিয়ে গেছে। আমরা সেগুলো পুনরায় চালুর চেষ্টা করছি। তবে এর জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। শুধু ভর্তুকি বা সরকারের অর্থায়নে এটি সম্ভব নয়। আমরা বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছি। তা সম্ভব হলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হবে ইনশাআল্লাহ।
আদিলুর রহমান আরো বলেন, চিনিকলটির আধুনিকায়ন ও যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত বিএমআরআই প্রকল্প দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। আমি আশা করেছিলাম আজই বিএমআরআই চালু হবে। পরে জানলাম কিছু কাজ এখনো বাকি। তবে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে খুব দ্রুতই এটি কার্যক্রমে ফিরবে। আমরা পুরো প্রকল্পটি দ্রুতই চালু করবো। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে একটি বাস্তবসম্মত পাঁচ বছরের রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। আমরা শুধু মিল চালু রাখতে নয়, উৎপাদন বাড়ানো, আধুনিকায়ন, শ্রমিকের অধিকার রক্ষা এবং কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। সব মিলিয়ে চিনি শিল্পকে আরও টেকসই ও লাভজনক পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও চিনি-খাদ্য শিল্প করর্পরেশনের চেয়ারম্যান রশিদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা।
আলোচনা সভা শেষে সম্মানিত কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লি. এর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আখ আবাদকারী ও সর্বোচ্চ আখ উৎপাদনকারী চাষীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ বছর সর্বোচ্চ আখ আবাদকারী চাষী প্রথম হয়েছে ইসমাইল হোসেন। দ্বিতীয় মজিদ মোল্লা। তৃতীয় বকুল হোসেন। সর্বোচ্চ আখ উৎপাদনকারী চাষী প্রথম শামীম হোসেন। দ্বিতীয় মোমিনুল হক। যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছেন গোলাম সরোয়ার শাহ এবং রকিবুল হাসান।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ৬২ কোটি টাকার লোকসানের বোঝা নিয়ে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ২০২৫-২৬ মৌসুমের ৮৮তম আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৫৬২ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। চাষিদের সার ও নগদ অর্থ বাবদ ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চাষি পর্যায়ে আখের ক্রয়মূল্য টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে চিনিকলটি ৬২ কোটি টাকা লোকসান দিলেও ডিস্টিলারির ১৯০ কোটি টাকা মুনাফার সুবাদে সমন্বয় শেষে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১২৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। গত ২০২৪-২৫ মৌসুমে ৬৫ দিনে ৭১ হাজার ২৩৫ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন হয়েছিল, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২০০ মেট্রিকটন। তবে লোকসান-লাভের দিক থেকে মিলের চিত্র ছিল ভিন্ন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চিনিকলে প্রায় ৬২ কোটি টাকা লোকসান দেখা দিলেও ডিস্টিলারি বিভাগে ১৯০ কোটি টাকা মুনাফা হয়। ফলে সার্বিক সমন্বয়ে মিলের মোট মুনাফা দাঁড়ায় ১২৯ কোটি টাকা। যা ভবিষ্যত পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মিল কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
দর্শনা কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান



