চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে নানা আয়োজনে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। ‘দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রাণিসম্পদে হবে উন্নতি’ এ শ্লোগানকে ধারন করে চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় চত্বরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। উদ্বোধনের পূর্বে একটি শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মেলা চত্বরে ফিতা কেটে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ মেলার উদ্বোধন করা হয়। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. সাহাবুদ্দিন।

দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে ৩৪ টি স্টল স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া, গাড়ল, কবুতর, মুরগী উল্লেখযোগ্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মওলানা মামুনুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায়  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

প্রধান অতিথির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন,  প্রাণিসম্পদ হলো প্রাণিজ আমিষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা এই প্রাণীগুলো লালন পালন করেন তাদের কাছে অনুরোধ, যাতে এই প্রাণীগুলো সঠিক ও সুস্থভাবে পালন করা হয়। ভালো মানের দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন করা প্রতিটি খামারের দায়িত্ব। যারা গবাদি পশু পালন করেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন পশু দ্বারা আশেপাশের কারো ফসলি জমি নষ্ট না করে। তিনি আরো বলেন, একটি প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ প্রদর্শনী করা জেলার খামারিদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেলার মানুষেরা প্রাণিসম্পদ সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবে এই প্রদর্শনের মাধ্যমে। জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের এরকম প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী পরিদর্শন করাতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রাণী সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পেত।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম বলেন, প্রাণিসম্পদ এমন একটি খাত যেখানে আপনারা বিনিয়োগ করলে দেড় থেকে চারগুণ পর্যন্ত লাভ পাওয়া যায়। এটি নির্ভর করে আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও আপনার ধারণার উপর। যারা প্রাণিজ খামার করতে চান তাদের সেই প্রাণী সম্পর্কে জানতে হবে। একটি প্রাণীর সুখ, অসুখ, দুঃখ, বেদনা সবকিছুই রয়েছে মানুষের মত। প্রাণীদের আরাম-আয়েশের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। গবাদি পশু পালনে সুন্দর পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি,  চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, খামারী আরিফ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাইফুল্লাহ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল নাঈম, ছাগল উন্নয়ন খামারের ব্যবস্থাপক সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খামারী ও সুধি মন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। বিকালে মেলায় অংশগ্রহনকারী ৬টি ক্যাটাগরীতে ১৮ জন খামারীর হাতে সনদপত্র দেয়া হয়। আগামী ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭ দিনব্যাপী মেলার সমাপ্তি ঘটবে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

আলমডাঙ্গা অফিস জানায়, গতকাল বুধবার সকাল ১০ টায় উপজেলা চত্ত্বওে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশীষ কুমার বসু।

প্রধান অতিথি ছিলেন ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আলমডাঙ্গার পরিচালক ডাঃ দীন বন্ধু সাহা, বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ মাসুদুর রহমান পিপিএম, কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াউল হক, জামায়াতে ইসলামী আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার আমীর শফিউল আলম বকুল, আইসিটি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ডাক্তার মোঃ মাহমুদুল হক। প্রদর্শনীর  স্টলে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি বিভিন্ন জাতের পাখি, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, পশুর ঔষধ, পশু খাদ্য এবং যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হয়। শেষে প্রধান অতিথি সহ অতিথিবৃন্দরা ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।

জীবননগর অফিস জানিয়েছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় খামারিরা অংশ নেন এবং বিভিন্ন পশু-পাখি প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডা. মো. আতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন- জীবননগর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. জুয়েল শেখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালানা করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার সাইফুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, দেশীয় জাতের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে আরো উন্নতি সম্ভব। খামারিদের সঠিক দিকনির্দেশনা, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হবে। পরে অংশগ্রহণকারী খামারি ও প্রদর্শনীতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং লিভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলডিডিপি) সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।

মেহেরপুর অফিস জানায়,  গতকাল বুধবার সকালে হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালী পরবর্তী আলোচনা সভায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবির। ভেটেরিনারি সার্জন ও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান শাওনের সঞ্চালনায়  বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া জাহান ঝুরকা, শেখ তৌহিদুল কবীর, সদর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখি ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, নারী ও যুব উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক মান অর্জন এবং সরকারি–বেসরকারি সমন্বয় আরও জোরদার হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন ও জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বক্তারা। আলোচনা সভা পরবর্তীতে অতিথিরা পায়রা উড়িয়ে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তা ও খামারীরা ৩০টি স্টলে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগী ও কবুতরসহ বিভিন্ন প্রাণী প্রদর্শন করে। পরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রদর্শনী স্টল পরিদর্শন করেন। শেষে সফল উদ্যোক্তা ও খামারীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *