আব্দুর রহমান অনিক, দর্শনা অফিস
দেশের চিনিকলগুলো যখন লোকসানে জর্জরিত, তখন চুয়াডাঙ্গার কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড (কেরুজ কমপ্লেক্স) ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নিজেদের ৮৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এই অর্থ বছরে সরকারের রাজস্ব খাতে ১৪০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১শত ২৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। চিনি কারখানার প্রায় সাড়ে ৬২ কোটি টাকার লোকসান পুষিয়েও এই বিশাল লাভ সম্ভব হয়েছে। কেরুজ কমপ্লেক্সের এই বিপুল মুনাফার নেপথ্যে রয়েছে মূলত ডিস্টিলারি বিভাগ ও সম্প্রতি গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ। এ ছাড়া দেশীয় মদ বোতলজাত করণের কারণেও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন হয়েছে। অনিরিক্ষিত তথ্যনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কেরুজ কমপ্লেক্সের ৬টি বিভাগের মধ্যে ৫টিতেই মুনাফা অর্জন হয়েছে। চিনি কারখানায় ৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোকসান হলেও ডিস্টিলারী বিভাগে মুনাফা অর্জন হয়েছে ১৯০ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক খামারগুলো থেকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। আকন্দবাড়িয়া পরিক্ষা মূলক খামার থেকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ৩৩ লাখ ২ হাজার টাকা। ৭৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন হয়েছে আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানায়। এ ছাড়া ফার্মাসিটিক্যাল বিভাগে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন হয়েছে। চিনি কারখানার লোকসান পুষিয়েও সরকারের রাজস্ব খাতের মধ্যে মাদক শুল্ক ৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭০৭ টাকা, ট্যাক্স ৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ও ভ্যাট জমা দিতে হয়েছে ২৫ কোটি ৬৩ লাখ ২১ হাজার ৯৪৮ টাকা। ফলে সরকারের রাজস্ব খাতে ১৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চিনি কারখানায় লোকশান পুষিয়ে, সরকারের বিভিন্ন খাতে প্রায় ১শ সাড়ে ৪০ কোটি রাজস্ব জমা দিয়েও মুনাফা অর্জন হয়েছে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
ডিস্টিলারি বিভাগে ফরেন লিকার (আমদানি করা লিকার) উৎপাদনে অটোমেশিন স্থাপন এবং গত অর্থ বছরের শুরুর দিকে ফরেন লিকার ও দেশীয় মদের মূল্য বৃদ্ধি এই রেকর্ড লাভে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। দেশীয় মদ বোতল জাতকরণের কারণেও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জিত হয়েছে। চিনি কারখানার লোকসান পুষিয়েও কেরুজ কমপ্লেক্স এই অর্থ বছরে সরকারের কোষাগারে মোট ১৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মাদক শুল্ক, ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ বিশাল অঙ্কের অর্থ অন্তর্ভুক্ত। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ কমপ্লেক্সের চিনি কারখানা এখনও পুরনো যন্ত্রপাতি নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে, যার ফলে গত মরসুমে ৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তবুও মিল কর্তৃপক্ষ আখচাষ বাড়ানো এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ চাষের মাধ্যমে আগামীতে লোকসান কমানোর আশাবাদী। চিনি কারখানার বিএমআরই (আধুনিকায়ন) কাজ প্রায় শেষের দিকে। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যোগদানের পর থেকে আখচাষিদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তিনি কৃষকদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উপর জোর দিচ্ছেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, এ সফলতা এলাকার আখচাষি, ডিলার, শ্রমিক-কর্মচারি, কর্মকর্তা ও শুভানুধ্যায়ীদের। কেরুজ কমপ্লেক্স এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাঁচামাল হিসেবে আখ চাষ বাড়ানো খুবই জরুরি। তিনি সবাইকে আন্তরিকতা ও কর্মদক্ষতার সাথে কাজ করে চিনি কারখানাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান।