স্টাফ রিপোর্টার
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গা জুড়ে বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন প্রতিমা তৈরীর কারিগরেরা। কারিগরদের দক্ষ হাতে বাঁশ-খড়ের কাঠামোতে মাটির আস্তরণে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার অপরূপ রূপ। প্রায় সব প্রতিমার কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। মাটি লাগানো ও শুকানোর কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। কিছু মণ্ডপে আগামীকাল থেকেই শুরু হবে প্রতিমা রঙের কাজ। মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, গনেশ, কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। পূজাকে সামনে রেখে প্রতিমাশিল্পীরা এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা হবে।বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে এবং ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জন এর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ১১২ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মন্দিরেই প্রতিমা নির্মাণ কাজ বেশ দ্রুততার সাথেই চলছে। শহরতলীর দৌলাতদিয়ার দক্ষিণপাড়া ও দক্ষিণ মাঠপাড়া বারোয়ারী দূর্গা মন্দির গুলোতে দেখা যায় কারিগরেরা একযোগে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত। দৌলতদিয়াড় দক্ষিণ মাঠপাড়া সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকাশ কুমার ঘোষ বলেন, আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা ঘটবে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা। এবার মায়ের আগমন হবে গজে এবং গমন হবে দোলানায়।
এবারের দুর্গাপূজোর বাজেট রাখা হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। প্রতিমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি টাকা আনুষাঙ্গিক খরচ হবে। আশাকরি সকলের সার্বিক সহায়তায় এবারের পূজা ভালোভাবে উদযাপিত হবে।
আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর থেকে আগত প্রতিমা তৈরীর কারিগর বিকাশ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে প্রতিমা রঙের কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রতিমা তৈরিতে আমরা মূলত এটেল মাটি ব্যবহার করে থাকি এবং আরো আনুষাঙ্গিক অনেক জিনিস ব্যবহৃত হয়। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমি আশাবাদী।
দৌলতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দূর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দৌলতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দূর্গা মন্দিরে প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে শুরু করে মণ্ডপ সজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক আয়োজন সবকিছুতেই আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও মিলনের উৎসবও বটে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পূজা সম্পন্ন করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি পূজার এই আমেজ সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও ইতিবাচকতার বার্তা ছড়িয়ে দেবে। সকলের সহযোগিতা ও শুভকামনা আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।
প্রতিমা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা পাবনার আমিনপুর থেকে আগত কারিগর উত্তম পাল বলেন, আমি অনেক বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছি। প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করি। চুয়াডাঙ্গার মানুষ খুব আন্তরিক, তাই এখানে কাজ করতে ভালো লাগে। প্রতিমা তৈরির কাজ কঠিন হলেও মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখেই আমরা অনুপ্রেরণা পাই।
মায়ের সাথে প্রতিমা বানানো দেখতে আসা ছোট্ট শিশু ছোয়াঁ বলে,
আমি মায়ের সাথে প্রতিমা তৈরি দেখতে এসেছি। দূর্গা মায়ের হাত, চোখ আর সাজ বানানো দেখতে খুব ভালো লাগছে। এত সুন্দর করে প্রতিমা বানানো হচ্ছে দেখে আমি খুব খুশি। মা বলেছে অল্প কিছুদিন পরেই পূজা শুরু হবে। আমি তখন প্রতিদিন মণ্ডপে আসব, বন্ধুদের সাথে খেলব আর আনন্দ করব।
দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন আয়োজকরা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিমা রংয়ের কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা। এরপর শুরু হবে সাজসজ্জা। চুয়াডাঙ্গা জুড়ে এখন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ভক্তদের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও অপেক্ষার প্রহর।