স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশীর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
এ সময় আগস্ট মাসের কার্যবিবরণী পাঠ করেন সহকারী কমিশনার সামিউল আজম। কার্যবিবরণীতে তিনি বলেন, জেলায় আগস্ট মাসে মোট ১১৩ টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তন্মধ্যে ডাকাতি ও দস্যুতা ১টি, চাঁদাবাজি ১টি, খুন ১টি, অপমৃত্যু ২৩টি, ধর্ষণ ৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৪টি, চুরি ১৩ টি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে সংঘটিত অপরাধ ২টি, মানব পাচার ৩টি এবং অন্যান্য ৬১টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। বিগত জুলাই মাসে মোট ১০৬ টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল। সেই তুলনায় আগস্ট মাসের সংঘঠিত অপরাধের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সভায় ধর্ষণ, অপহরণ, গুম, হত্যা কিংবা নিখোঁজের মতো গুরুতর অপরাধ যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে পূর্ব থেকে সতর্ক হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ, খাদ্যে ভেজাল রোধ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রতিপালনের মত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়াও আগস্ট মাসের বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরেন তিনি। সকল দপ্তর প্রধানগণ জানিয়েছেন নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণের সভা/সমাবেশ অনুষ্ঠিত অব্যাহত আছে। আগস্ট ২০২৫ মাসে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ২টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও বাল্যবিবাহ, যৌতুক এবং যৌন হয়রানির প্রতিরোধে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক জেলাব্যাপী মোট ১৪ টি প্রচারণামূলক সভা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩টি অভিযানে ৫টি মামলায় ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা আগস্ট মাসে ৪৬ টি অভিযানে ১২৩টি মামলায় ৪২ হাজার ৭২০ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড আরোপ করা হয়েছে। বিআরটিএ কর্তৃক ১৮ টি অভিযানে ৬৯ টি মামলায় ২৫ হাজার ৬২০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ বিভাগ কর্তৃক আগস্ট মাসে ১৫০ টি মামলায় ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত সকলের মাঝেই মুক্ত আলোচনা করা হয়। জেলার সার্বিক পরিস্থিতি, জনগণের সুবিধা-অসুবিধা ও জেলার উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক বক্তব্য রাখেন। এ সময় পাবলিক প্রসিকিউটর মারুফ সরোয়ার বাবু বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আমরা প্রায়ই দেখি চুয়াডাঙ্গাতে আত্মহত্যা বা অপমৃত্যু বেড়েই চলছে। এ সকল আত্মহত্যার মাঝে কিছু হত্যাও থাকতে পারে। অনেকেই হত্যা করে সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করতে পারে। তাই এ বিষয়ে সঠিক তদন্তের প্রয়োজন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নানান রকম দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে মামলায় দূর্বল অভিযোগ নামার কারনে আসামিরা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়। এগুলোর সঠিক ও সুষ্ঠ তদন্ত প্রয়োজন।
হেমন্ত কুমার বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সড়কের বেহাল দশা। চুয়াডাঙ্গা-ডিঙ্গেদহ ও দামুড়হুদা-দর্শনা সড়কে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রেলবাজার থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এটি মেরামত করা প্রয়োজন। শহরের প্রবেশমুখ হওয়ায় হাজারো মানুষ এ রাস্তা পার হতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়ে। এছাড়াও হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কোন রোগী গেলে টাকা ছাড়া কোন চিকিৎসা পাওয়া যায় না। গজ, ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন ঔষধ পথ্য বাইরে থেকে কিনতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার গোলাম মওলা বিপিএম বলেন, জেলার অপরাধ দমনে পুলিশ সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের দায়িত্বে যদি কোন ত্রুটি থেকে থাকে তবে তা সংশোধন করা হবে। অপমৃত্যুর ক্ষেত্রে যদি তা হত্যা হয় তবে সেখানে অবশ্যই সরেজমিনে পুলিশ সুপার যাবে। সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আমি সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। স্বল্প সংখ্যক পুলিশ দ্বারা জেলার যানজট নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন। চুয়াডাঙ্গা জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন এমন একটি জায়গা যেখানে প্রাণবন্তভাবে সব কিছুর আলোচনা করা যায়। যেখানে দাপ্তরিক দুর্বলতা গুলো আমরা তুলে ধরতে পারি। আমি মনে করি এটি একটি সর্বোচ্চ ফোরাম যেখানে আমরা জেলার খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী সহায়তায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে বলে আমি মনে করি। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জন হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শামীম রেজা ডালিম, চেম্বারস সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি এম জেনারেল প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদী ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-আমিন, এনএসআই উপ-পরিচালক সামসুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ, জেলা তথ্য অফিসার শিল্পী মন্ডল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল প্রমুখ।