স্টাফ রিপোর্টার
জুলাইযুদ্ধে নিহত চুয়াডাঙ্গার দুজন শহীদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামে শহীদ শাহরিয়ার শুভর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এ সময় জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে শহীদ মাসুদ রানার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদি ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে জেলা বিএনপির আয়োজনে দুই জন শহীদের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করা হয়।

সকাল ৯ টায় কয়রাডাঙ্গা গ্রামে জুলাই -আগষ্ট ছাত্রজনতার গনঅভ্যুত্থানে শহীদ মাসুদ রানা কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো শরীফুজ্জামান শরীফ। এ সময় বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে শংকরচন্দ্র গ্রামে শহীদ শাহরিয়ার শুভর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিনিয়র বিএএনপি নেতা খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনাসহ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি বেসরকারি অফিস ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানোর পর দুটি স্থানেই মোনাজাত অনুষ্টিত হয়। পরে সকাল ১০ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের সম্মিলন ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মুন্সি আবু সাইফ ও কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা নুসরাত জাহান করবীর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এ সময় জুলাই যুদ্ধে নিহত শহীদ শাহরিয়ার শুভর বাবা ও শহীদ মাসুদুজ্জামান এর স্ত্রী জান্নাতুল সেফা তাদের আত্মত্যাগের কথা জানান। এ সময় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আসলাম হোসেন অর্ক, সিরাজুম মুনিরা, হাসনাত জাহান খুশবু, শিহাব, আরাফাত রহমান ও আলাউদ্দীন জুলাই আন্দোলনে বর্বরচিত ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে দুই শহীদ পরিবার ও জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া জুলাই যোদ্ধাদের মোট ৫৪ জনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট এবং জুলাই শহীদস্মৃতি ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, যে ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এ সংগ্রামটি করা হয়েছিল আমরা যেন সেই ইচ্ছা থেকে বিন্দুমাত্র সরে না যাই। এবং সেই স্বপ্নটা সার্থক করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকি। যে স্বপ্ন নিয়ে সকল জুলাই যোদ্ধারা আন্দোলন করেছিলেন অনেকে শহীদ হয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেন আমরা কোনরকম ত্রুটি না করি। সকাল ৯ টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত যে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা হয়েছে সবই জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বিপিএম বলেন, শহীদ পরিবারের বেদনাদায়ক কথাগুলো সত্যিই আমাদের আবেগ আপ্লুত করেছে। জনগণের অধিকার যদি নিশ্চিত করা যেত, সমাজের উন্নয়নের ক্রমবিকাশের চাকা যদি সচল রাখা যেত তাহলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। জুলাই আন্দোলনে এ ধরনের রক্তক্ষয় কখনোই আমাদের কাম্য ছিল না। আমরা সকলেই বক্তব্যে যে সকল কথাগুলো বলেছি তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে আমীর রুহুল আমিন বলেন, বৈষম্য বিরোধী একটি স্লোগান থেকেই জুলাই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সেই বৈষম্য যদি এখনো আমাদের মাঝে থাকে তাহলে আমি বলব জুলাইয়ের ফল এখনো আমরা পাইনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি পুতুল খেলার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। যখন ইচ্ছে কাউকে জঙ্গি বলে গ্রেফতার করত, যখন ইচ্ছে কোন রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করত, যখন ইচ্ছে পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রমোশন এবং ওএসডি করতো, সিভিল প্রশাসনের লোকজনকেও তিনি তার মত করেই রাখতেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পাঁচই আগস্ট আজকের এই দিনে বাংলাদেশ থেকে খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিল। যারা জনগণের জন্য কাজ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এটি শুধু বাংলাদেশে না ইতিহাস একটি বিরল ঘটনা। আরো বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, চুয়াডাঙ্গা জেলা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য মোঃ শাকিল হোসেন প্রমুখ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ, সহকারী কমিশনার মোঃ আশফাকুর রহমান, সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নাঈম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান, জেলা তথ্য অফিসার শিল্পী মন্ডল, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুর রহমান, প্রথম আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শাহআলম সনি, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া জুলাই যোদ্ধারা এবং গনমাধ্যম কর্মীরা।