বাগেরহাটের কাশিমপুরে ব্র্যাকের সম্পদ হস্তান্তর, ১৩ উপকার ভোগীর মাঝে গবাদি প্রাণী বিতরণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

ব্র্যাকের ‘২০২৫ কোহর্ট’ কার্যক্রমের আওতায় বাগেরহাট জেলার কাশিমপুর শাখায় ১৩ জন অতিদরিদ্র উপকারভোগীর মাঝে গবাদি প্রাণীসহ বিভিন্ন সম্পদ হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা ছিল আশা, আত্মবিশ্বাস ও সম্ভাবনার এক মিলনমেলা।

ব্র্যাক বাগেরহাট জেলার প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্ব  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক  আহমেদ কামরুল হাসান। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ,বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মোস্তাফিজুর রহমান ,UPG–RM মো. মুজিবুর রহমান,RAU খুলনার বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু সাঈদ‌ ,JGD–RM নাহিদা সুলতানা ,RM–Dabi মো. নুরুল ইসলাম ।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন,ব্র্যাকের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের সম্পদ হস্তান্তরের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও সাবলম্বী হয়ে ওঠে। আমরা সরকারি পর্যায় থেকে এ ধরনের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাব।

ইউপিজি কাশিমপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন,অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা আবেগময় কণ্ঠে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।অনেক উপকারভোগী এক সময় অভাব-অনটনে দিন কাটালেও আজ তারা স্বপ্ন দেখছেন, আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলছেন। এই পরিবর্তনটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

তিনি আরও বলেন,আমাদের এই কর্মসূচি শুধু গরু দেওয়া নয়, বরং সম্পূর্ণ একটি ‘গ্র্যাজুয়েশন মডেল’ যেখানে উপকারভোগীরা ধাপে ধাপে উন্নতির পথে এগিয়ে যান। তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজ হাতে গড়ে তোলার সাহস পাচ্ছেন।

কাশিমপুরের রাশিদা বেগম বলেন,আমি কখনো কল্পনাও করিনি নিজের একটি গরু থাকবে। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে ব্র্যাকের কারণে। এই গরুটি আমার ভবিষ্যতের আশ্রয়।

খাদিজা বেগম বলেন, এই সহায়তা আমার পরিবারের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। এখন আমি গরু পালন করে আয় করতে পারব এবং আমার সন্তানের লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে পারব।

চম্পা বেগম বলেন,আগে আমি প্রতিদিনই অনিশ্চয়তা নিয়ে ঘুমাতে যেতাম। আজ আমি জানি, আমার হাতে থাকা এই গরুটি একদিন আমার জীবনের স্থায়ী জীবিকার উৎস হয়ে উঠবে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ব্র্যাকের এ মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করে ভবিষ্যতেও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ব্র্যাকের ‘অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি (Ultra Poor Graduation Program)’ এর আওতায় এই সম্পদ হস্তান্তর কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপকারভোগীরা শুধু গবাদি প্রাণীই নয়, বরং প্রশিক্ষণ, পশুপালন পরামর্শ, চিকিৎসা সহায়তা এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার সুযোগও পান।

প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ,উন্নত জাতের গাভী ,গো-খাদ্য ,গোয়ালঘর নির্মাণের উপকরণ ,প্রাথমিক চিকিৎসা কিট ,নিয়মিত ফলোআপ ও মনিটরিং সেবা।

এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধুমাত্র দান নয়, বরং দক্ষতা ও সচেতনতা গড়ে তুলে উপকারভোগীদের স্বনির্ভর করে তোলা।

ব্র্যাকের এই সম্পদ হস্তান্তর কর্মসূচি শুধু কিছু প্রাণী দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আত্মনির্ভরশীল জীবনের দ্বার উন্মোচন। কাশিমপুরের এই ছোট্ট একটি আয়োজন অসংখ্য পরিবারের জীবনে বড় একটি পরিবর্তনের সূচনা করল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *