স্টাফ রিপোর্টার
আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বাদেমাজু গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে বিএনপির কুশল বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। বক্তব্যের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি আব্দুর জব্বার বাবলু ভাইয়ের ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম। ডাউকি ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে তিনি নিজেই বলেছিলেন, “এই ইউনিয়ন আমার দায়িত্বে, আমি যেভাবেই হোক সাজিয়ে রেখেছি।” তিনি যেভাবে ইউনিয়ন পরিচালনা করেছেন, তাতে বিএনপি বারবার বিজয়ী হয়েছে এবং আগামীতেও বিজয়ী হবে বলে বিশ্বাস করি।’
শরীফুজ্জামান আরও বলেন, ‘জব্বার ভাই মাঝে মাঝে আমাকে বলতেন- “শরীফ, আমি কি দেখে যেতে পারব এই সরকার পরিবর্তন?” এই কথাটা আজও আমার মনে খুব নাড়া দেয়, যখন আমি একা থাকি। তিনি প্রায়ই বলতেন এটা। আমি সবচেয়ে খুশি এই কারণে যে, তার শেষ নিঃশ্বাসটি পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলের রাজপথে। কেন্দ্র ঘোষিত একটি পদযাত্রা চলাকালে, সেই পদযাত্রাতেই তার জীবনাবসান ঘটে।’
বক্তব্যে শরীফুজ্জামান বলেন, ‘আজকে ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনকালে এই কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় গঠিত। সে জন্য সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব- ৫ তারিখের পর অনেকেই আসবেন, অনেক কথাও বলবেন। কিন্তু আমার দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা হলো বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জাতীয়তাবাদী পতাকার ছায়াতলে সুসংগঠিত রাখা।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন দিবে কেন্দ্র। দলের নীতি-নির্ধারকরা, চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যারা আছেন-তাঁরাই নির্ধারণ করবেন কে হবেন প্রার্থী। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা। আগামীর নির্বাচন একটি কঠিন নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনের জন্য জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে, জনগণকে ভোটমুখী করতে হবে। কে প্রার্থী হবেন, সেটা কেন্দ্র ঠিক করবে। আর আমাদের দায়িত্ব হবে সেই প্রার্থীর জন্য ধানের শীষ নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া।’
এছাড়াও তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে মনোনয়ন নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তিকর কর্মকাণ্ডে কেউ লিপ্ত না হন। কোনো নেতা-কর্মীও যেন এমন কিছু না করেন, যাতে আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, এই মাঠ আমরা অনেক কষ্টে তৈরি করেছি-জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কত রাত ঘুমাইনি, কত রাত কাটিয়েছি পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে; ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে মিছিল করেছি। আপনারা কত কষ্ট করে চুয়াডাঙ্গায় আন্দোলন করেছেন। যেদিন আমি গ্রেপ্তার হই, সেদিন আপনারা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে পারেননি- তার আগেই জেনে যান আমি ধরা পড়েছি।’
শরীফুজ্জামান বলেন, ‘তাই এমন কিছু কেউ করবেন না, যাতে আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের পরিশ্রমে গড়া মাঠে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কে ধানের শীষ পাবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান- ব্যক্তিস্বার্থ উপেক্ষা করুন।’ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কারো ব্যক্তিগত লবিংয়ে হবে না। নয়টি ওয়ার্ডের মতামতের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।’
ডাউকি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আখতার হোসেন জোয়ার্দার, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিণ্টু, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি এহসানুল হক স্বরাজ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহসভাপতি আইয়ুব আলী, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান শুভ, জামজামি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল সিরাজী সালাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রাজু আহমেদ, ডাউকি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হায়দার আলী, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, সাইফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী মাস্টার, ইউনিয়ন যুবদলের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুল হুদা এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের সদস্য শাহারু আহমেদ। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াত করেন ইউনিয়ন ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সোহরাব হোসেন।