স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানিয়েছেন তার পরিবার। ঢাকা সিএমএম আদালতের আদেশে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের শহীদ শাহরিয়ার শুভ’র লাশ উত্তোলনের কথা থাকলেও পরিবারের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১ টায় লাশ উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামে শহীদ শাহরিয়ার শুভ’র সমাধিতে গিয়ে উপস্থিত হন। পরে পরিবারের আপত্তিতে একটি লিখিত আপত্তিনামা নিয়ে ফিরে আসেন তারা।
জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হন শাহরিয়ার শুভ। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে নিজ গ্রাম শংকরচন্দ্রে তার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে পুলিশ বাদী হয়ে লাশ উত্তোলনের জন্য ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে আবেদন করেন। বিজ্ঞ সিএমএম আদালত জুলাই আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। পরে গতকাল বুধবার বেলা ১১ টায় শহীদের লাশ উত্তোলনের দিন ধার্য করা হয়। তার সমাধিতে লাশ উত্তোলনের জন্য গেলে পরিবারের সদস্যরা এতে আপত্তি জানায় এবং তারা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশফাকুর রহমানের নিকট একটি আপত্তিনামা জমা দেন। এতে শহীদ শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশফাকুর রহমান বলেন, ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালত হতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর শহীদ শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলন করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য একটি নির্দেশনা আসে। জেলা প্রশাসন থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার কথা হয়েছিল তাই আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিযুক্ত হয়েছি। আমরা এখানে এসে দেখতে পেলাম যে শহীদ পরিবারের সদস্যরা লাশ উত্তোলনে আগ্রহী নয়। তারা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানানোয় শহীদ শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়েছে। আমরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে একটি আপত্তিনামা গ্রহণ করেছি এবং সেটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দাখিল করা হবে। পরে জেলা প্রশাসন থেকে একটি রিপোর্ট ঢাকা সিএমএম আদালতে প্রেরণ করা হবে। বিজ্ঞ আদালত যে সিদ্ধান্ত নেয় সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম করা হবে।
মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এস আই রোকনুজ্জামান বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার শুভর লাশ উত্তোলন করার নির্দেশ এসেছে ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে। তার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ওনার কখন মৃত্যু হয়েছে, কি কারনে মৃত্যু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে জানা যাবে। আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকা সিএমএম কোর্টে শহীদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোর্ট থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেওয়া হয়।
জুলাই শহীদ শাহরিয়ার শুভর পিতা আবু সাঈদ বলেন, আমার ছেলে গত ২৪ সালের ১৯শে জুলাই কোটা আন্দোলনে শহীদ হন। ঢাকা থেকে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিরপুর থানায় দায়েরকৃত মামলার রায় পেয়ে তারা আমার ছেলের লাশ উত্তোলন করতে আসে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে ও পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা লাশ উত্তোলন করতে চাচ্ছি না। এজন্য আমি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আপত্তিনামা দাখিল করেছি।
শহীদ শাহরিয়ার শুভর স্ত্রী রাজিয়া খাতুন বলেন, আজ থেকে প্রায় ১৬ মাস আগে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়েছে। ১৬ মাস আগে আমরা এক ব্যাথায় ব্যথিত হয়েছি। আমরা চাইনা সেই ব্যথার আবার পুনরাবৃত্তি হোক। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শংকর চন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুল ইসলাম সুজন, সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম, ওয়ারিয়র্স অফ জুলাইয়ের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহফুজ হোসেন, সদস্য সচিব সলিমিন হোসেন সোহাগ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনা জাহান খুশবু, শহীদের পরিবারবর্গ ও জেলা পুলিশের একটি টিম।



