চুয়াডাঙ্গায় ২ লাখ ৭০ হাজার খেজুরগাছ প্রস্তুত শীতের আগমনী বার্তায় মাঠে গাছিরা, রস থেকে গুড় তৈরির উৎসবে মুখর গ্রামীণ জনপদ

মুন্না রহমান, স্টাফ রিপোর্টার

বাংলার প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্যে এখন হেমন্তের মাঝামাঝি। দিনে মিষ্টি রোদ, ভোরের পাতায় শিশির বিন্দু, হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রকৃতিতে এখনও পুরোপুরি শীতের আমেজ না এলেও চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। জেলার ৪ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছিদের ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। একই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা। খেজুর গাছ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কার্তিক মাসে গাছ শুকানো, নল লাগানো শেষে রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ পেশার সাথে ১০/১৫ হাজার কৃষক জড়িত রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৬০ টি খেজুরের গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের রস থেকে ১০/১২ কেজি গুড় উৎপাদন করা যায়। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৫শ মেট্রিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা কৃষি বিভাগের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খেজুর রস আহরণের মধ্য দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শীতের আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়। বর্তমানে চলছে গাছ ঝাড়া, পরিষ্কার করার কাজ। আর কদিন পর শীতের তীব্রতা বাড়লে শুরু হবে খেজুর গাছের বুক চিরে সুস্বাদু রস আহরণের মৌসুম। যেসব এলাকায় বেশি খেজুর গাছ রয়েছে, সেখানে ইতোমধ্যে গাছিরা অস্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করেছেন। রস থেকে গুড় তৈরির জন্য তারা খেজুর গাছের ডালপালা শুকিয়ে জ্বালানি হিসাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের গাছি শাহিন আলী বলেন, বর্তমানে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য প্রায় ১২০ টি গাছ ঝোড়া ও পরিষ্কার করা শুরু করেছি। তবে আরও দুই সপ্তাহ পর খেজুর গাছে নালি বসানোর কাজ শুরু হবে। খেজুর গাছ একবার চাঁছলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। তারপর তিনদিন গাছ শুকাতে হয়। শুকনো গাছের রস সুমিষ্ট হয়। শীত যত বাড়বে, তত বেশি খেজুরের রস সংগ্রহ হবে। খেজুরের রস সংগ্রহ করে, সেই রস জাল দিয়ে পাটালি ও গুড় তৈরি করা হয়। রস ও গুড় তৈরীর কাজ শুরু হয়ে চলবে ফাল্গুন মাস জুড়ে।

চুয়াডাঙ্গার গোপীনাথপুরের গাছি আসাদুল হোসেন বলেন, এই মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য আমি ৪০ টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছি। আর দশ দিন পরে গাছগুলোতে নালি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর সপ্তাহ খানেক পর থেকেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে। অর্থাৎ নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে। একটি গাছ থেকে ১০/১২ কেজি গুড় উৎপাদন বলে আমি আশাবাদী। চুয়াডাঙ্গার ধুতুরহাট গ্রামের গাছি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ১৪০টি গাছ প্রস্তুত করা শেষ। অগ্রহায়ণ মাসের শুরুর দিক থেকেই রস আহরণ করা শুরু হবে। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১২ কেজি গুড় উৎপাদন করা সম্ভব। এই বার শীত বেশি পড়লে গুড় উৎপাদন ভালো হবে। আমরা আমাদের খেজুরের গুড় গুলো পার্শ্ববর্তী সরোজগঞ্জ বাজারে বিক্রি করি।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার সব থেকে ঐতিহ্যবাহী  গুড়ের হাট সরোজগঞ্জ বাজার। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গাছীরা গুড় নিয়ে সরোজগঞ্জ বাজারে আসেন। নির্ভেজাল ভালো মানের গুড় বিক্রয়ে সরোজগঞ্জ বাজারের বেশ সুনাম রয়েছে। সামনে শীতকে কেন্দ্র করে সরোজগঞ্জ বাজারের গুড়ের হাটটিও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই হাটে উঠতে শুরু করবে খেজুরের গুড় এমনটা মনে করছেন অনেকেই। গত বছর চুয়াডাঙ্গায় ২২০/২৮০ টাকা দরে খেজুরের গুড় ও ৩০০ টাকা দরে পাটালি বিক্রি হয়েছিলো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, জেলায় গতবার গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। এবছর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫শ মেট্রিক টন। এবছর শীতের তীব্রতা বাড়লে ভালো মানের গুড় উৎপাদনে সক্ষম হবেন গাছিরা। তবে গাছিদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে খেজুরের রসে কোন পাখি বা বাদুড় না বসতে পারে। এতে করে স্বাস্থ্যসম্মত ও ভালো মানের গুড় উৎপাদন হবে। গুড়ে ভেজাল রোধে সকল গাছিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *