জীবননগরে স্বর্ণ চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরণ, পুলিশের অভিযানে অপহৃত পাঁচজন উদ্ধার, ভিকটিমসহ গ্রেফতার-৪

স্টাফ রিপোর্টার

জীবননগরে চাঞ্চল্যকর স্বর্ণ চোরাচালান এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপহৃত পাঁচজনকে শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযানে যশোর জেলার ঝিকরগাছা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫ টায় পুলিশ সুপারের সন্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের এ তথ্য জানান। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর থানাধীন গোয়ালপাড়া (মাঠপাড়া) গ্রামের মোঃ শওকত আলী গত ২১ অক্টোবর তারিখে জীবননগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এজাহারে তিনি জানান, স্বর্ণ চোরাচালানকে কেন্দ্র করে আসামি আব্দুল মজিদ, মোঃ মিজানুর রহমান রুবেল, লালন মন্ডল, মোঃ আব্দুস সামাদ, মোঃ বিপ্লব হোসেন, মোঃ শাহীনসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন তার ছেলেসহ মোট ৫ জনকে অপহরণ করেছে। অপহৃতরা হলেন মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩৫),মোঃ আনারুল ইসলাম (৫০),মোঃ হাসান মিয়া (২৬) ,মোঃ আবুল হোসেন (২৭),মোঃ স্বপন ইসলাম (৪৪)। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১২ অক্টোবর ২৫  তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার সময় শফিকুল ইসলাম ও আনারুল ইসলামকে এবং গত ১৩ অক্টোবর  সকাল ৯ টার সময় হাসান মিয়া, আবুল হোসেন ও স্বপন ইসলামকে অপহরণ করা হয়।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তারা জানায়, গত ১২ নভেম্বর  সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে ‘বগার মাঠের মধ্য দিয়ে’ ভিকটিম ও স্বর্ণ পাচারকারী শফিকুল ইসলামের ৫০ পিস স্বর্ণের বার হারিয়ে যায়। স্বর্ণের বারের মালিকপক্ষ এই স্বর্ণ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ভিকটিমদের অপহরণ করে। অপহরণের পর তাদেরকে যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানাধীন হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের জনৈক রেজাউল ইসলাম এর খামারের গোডাউনে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়। সেখানে স্বর্ণের বার উদ্ধারের জন্য তাদের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, শফিকুল ইসলামের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়।   

প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়,  চুয়াডাঙ্গা জেলার  পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলার দিকনির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জামাল আল নাসের ও  সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল)’র মোঃ আনোয়ারুল কবীরের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অভিযান দল গঠিত হয়। ডিবি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এবং পুলিশ সুপারের বিশেষ টিমের সমন্বয়ে গঠিত এই দল গতকাল বুধবার সকাল ৭ টার দিকে ঝিকরগাছা থানাধীন হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের নির্জন জায়গায় অবস্থিত রেজাউল ইসলাম এর খামারে অভিযান চালায়। শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযানের মাধ্যমে অপহৃত ৫ জন ভিকটিমকে সফলভাবে উদ্ধার করা হয়। তবে খামারবাড়ির মালিক রেজাউল ইসলাম এবং আব্দুল গফ্ফার আগেই পালিয়ে যান।

উদ্ধার অভিযানের সময় খামারবাড়ী থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, যশোর ঝিকরগাছার বাকড়া এলাকার আব্দুল কাদের এর ছেলে মোঃ বিল্লাল হোসেন (৪০), তার স্ত্রী মোছাঃ সাগরিকা খাতুন (২৮) ও যশোর ঝিকরগাছার কুল্লা এলাকার রঞ্জন দেবনাথ এর ছেলে গ্রাম্য ডাঃ বিকাশ দেবনাথ (৩০)। এদিকে প্রাথমিক তদন্তে ভিকটিম শফিকুল ইসলাম অপহরণে জড়িত থাকায় তাকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। 

প্রেসকনফারেন্সে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানকে কেন্দ্র করে জীবননগর থানায় একটি অপহরণ মামলার রুজু করা হয়েছিল। পাঁচজন অপহৃত হয়েছে জেনেই আমরা বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে নিই। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ভিকটিম উদ্ধারে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের কাছে তথ্য আসে যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের জনৈক রেজাউল ইসলাম এর খামারের গোডাউনে এই পাঁচজন ভিকটিমকে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি এই রেজাউলও এই স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত। এই ঘটনা জানতে পারার পরে বুধবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে অভিযান পরিচালনা করে পাঁচজন ভিকটিমকেই উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমসহ এই ঘটনার সাথে জড়িত চার জনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *