সমাজ উন্নয়নে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছে আলমডাঙ্গার নারী উদ্যোক্তা জান্নাতুল

খন্দকার শাহ আলম মন্টুঃ

প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোন না কোন গল্প  থাকে, কারো হতাশার আবার কারো সফলতার।জীবন মানেই উত্থান – পতন, আনন্দ – বেদনা। আজ তেমনি এক স্বপ্নবাজ তরুণীর গল্প শোনাতে যাচ্ছি। এ গল্প সমাজ উন্নয়নের  গল্প।একটি মেয়ে হাজারো প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে আশাহত না হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। জান্নাতুল ফেরদৌস ঊষা তার শৈশব কেটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার, আলমডাঙ্গা উপজেলার, বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে।যখন সে ক্লাস এইটে পড়ে তখন হঠাৎ করে তার আব্বু মারা যায়।আর একটা পরিবারে বাবা না থাকলে যে কি কষ্ট সেটা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছে সে।অসহায়ত্ব জীবন যাপন করার সময়ই সে  বুঝতে পারতো তার মত মানুষদের কেমন পরিস্থিতি হয়।তখন থেকেই তার মানুষের প্রতি মায়া তৈরি হয়।তার আজও মনে পড়ে একজন তার বই চেয়েছিলো।সে দিয়েছিলো, তার মা বলেছিলো এই গুলো বিক্রি করে নতুন ক্লাসের বই কিনতে পারতিস।মাকে সে বলেছিলো মা ওরাতো অসহায় বই কিনতে কষ্ট হবে। নিজ গ্রামের , ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শেষ করে,এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়।দশম শ্রেণিতে উঠার পর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সে। একই গ্রামে বিয়ে হয়।ভালোই চলে বিবাহিত জীবন। শ্বশুর বাড়িতে এসেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়।কারো চাউল নেই,তরকারি নেই তার কাছে আসে।সেও খালি হাতে তাদের ফিরিয়ে দেয়না।মানুষের জন্য কাজ করা দেখেই গ্রামের মানুষ সবাই এক প্রকার জোর করেই ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেয় তাকে।সব চেয়ে    ভালোলাগার বিষয় ছিলো নির্বাচনে তার তেমন কোন খরচই হয়নি,সমাজের মানুষই সব খরচ বহন করে এবং আলহামদুলিল্লাহ বিপুল পরিমাণ ভোটে নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবাই কাজ করে গেছে সে।এরপর থেকেই সমাজের জন্য কাজ করা শুরু। ২০১২ সালে সুফিয়া কামাল ফেলো সংগঠনের অধীনে অপরাজিতা নারী নেতৃত্ব প্রদান করেন জান্নাতুল। 

একটা এনজিওর মাধম্যে  বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের উন্নয়নে কৃষকজোট সংগঠন তৈরি করে সেখানে কৃষকের উন্নয়নে কাজ করেছে জান্নাতুল ।তাদের নায্যমূল্যে সার সরবরাহ, বীজ সরবরাহ, জিকে ক্যানেলে পানির জন মানববন্ধন করেছে সে।এতে করে কৃষক যতেষ্ট উপকার পেয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে 

মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পে নাম মাত্র সম্মানী নিয়ে ৬ মাস ক্লাস করায়।৬ মাস হওয়ার পরেও মহিলারা আরও শিক্ষতে চাই।পরবর্তীতে আরও তিন মাস ফ্রীতে তাদের ক্লাস করায় সে।আলহামদুলিল্লাহ এতে তারা অনেক উপকৃত হয়ছে। এছাড়াও লোকমর্চা একটি সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে, বাল্য বিয়ে,যৌতুক,নারী নির্যাতন, মাদক বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কাজ করেছে জান্নাতুল।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন   

এই সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সমাজের মানুষের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে সে।অসহায় মানুষের কথা শুনতে ছুটে গেছে সমাজের বিভিন্ন জায়গায়।বিশেষ অবদান রাখায় পুরুষ্কারও পেয়েছি।

 সে একজন উদ্যোক্তা।কাজ করে কুশিকাটার পণ্য নিয়ে।নিজ হাতে তৈরি করে।এগুলো  এলাকার মেয়েদের শিখাচ্ছেন তিনি সম্পূর্ণ ফ্রীতে।তার মত তারাও একদিন সাবলম্বী হয়ে পরিবার ও সমাজের উপকার করবে।এজন্য জাহানারা যুব মহিলা সংস্থা থেকে অদ্বিতীয়া নারী হিসেবে  এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জান্নাতুল 

করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেছে।তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।সচেতনতা মূলক বার্তা দিয়েছে সে। বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতা ও নিজ উদ্যোগে অসহায় মানুষের মাঝে শীতে কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

এছাড়াও বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কাজ করে যাচ্ছে  সচেতনতামূলক উঠোন বৈঠক করেছে সে।

  তার ইচ্ছে আছে সমাজের অসহায় মহিলাদের নিয়ে একটা উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার।যেখানে মেয়েরা হাতের কাজ করবে।সমাজ ও পরিবারকে  অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারে।নারীরা যেনো সমাজের বোঝা না হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *