চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকদের সাথে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতবিনিময়

স্টাফ রিপোর্টার

ইসলামী ছাত্রশিবির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অনেকেই প্রশ্ন করেন ইসলামী ছাত্রশিবির সকলের মাঝে এত জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্যতা পেল কিভাবে? আসলে ইসলামী ছাত্রশিবির হঠাৎ করেই জনপ্রিয়তা পায়নি। আমরা ১৯৭৭ সাল থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে কাজ করি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সমাজের ছাত্রদের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছানো। পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সৎ, দক্ষ এবং দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহমেদের সভাপতিত্বে জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, আপনারা জানেন জুলাই, আগস্টের আগ পর্যন্ত ২৩৪ জন শিবির কর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে আমাদের শত শত শিবির কর্মীকে গুম করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াকে গুমের অভয়ারণ্য করে তোলা হয়েছিল। এখনো আমাদের ৭ জন ভাই নিখোঁজ আছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গুলোতে আমাদের ভাইয়ের রক্ত ঝরেছে। আমরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি ছাত্রদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, ছাত্রদের চাওয়া, আশা-আকাঙ্খা পূরণের চেষ্টা করছি। মহান আল্লাহ তালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি এত জুলুম নির্যাতনের পরও আমাদের আদর্শটি ঠিক রেখেছে।

ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রেীয় কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, সম্প্রতি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বড় ধরনের বিজয় লাভ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ ছাত্রসমাজ আমাদের ওপরে যে প্রত্যাশার জায়গা বা আমাদের উপর যে আস্থা সেটি তারাই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রদর্শন করেছে। আমরাও বাংলাদেশের নতুন একটি নজির স্থাপন করেছি। এত বড় একটি বিজয়ের পর যেখানে অন্যরা উল্লাস, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তো, সেখানে আমরা কোন ধরনের বিজয় মিছিল পর্যন্ত করিনি। আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সেজদারত হয়েছি। আমাদের এই বিজয় তখনই সার্থক হবে যখন আমাদের করা ওয়াদা গুলো পূরণ হবে। আপনারা ইতোমধ্যে খেয়াল করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির বিজয় হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে। পরিষ্কার পরিছন্নতা, শিক্ষার্থীদের অবকাঠামগত উন্নয়ন, তাদের পড়াশোনা গবেষণার জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন তা আমরা তৈরি করতে চেষ্টা করছি। আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য ছাত্র শিবির সর্বদা কাজ করবে।

এক সময় ছাত্র রাজনীতি মানেই ছিল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সহিংসতা ও গোলামী তন্ত্র কায়েম করা। কিন্তু আজ বাংলাদেশের ছাত্ররা সেই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে— বলেই ৫ আগস্টের পরিবর্তন ঘটেছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের রাজনীতি ফিরে আসবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা চাই ছাত্র রাজনীতি হোক সেবামূলক, শিক্ষাবান্ধব ও কল্যাণমুখী। উন্নত বিশ্বের মতো ছাত্র রাজনীতি হোক দেশের ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণভোটের মাধ্যমে তা করা শ্রেয় হবে। আমরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই, যা ইতোমধ্যেই ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব সরাসরি মিশে যাক। যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটির প্রভাব অন্যটির ওপর পড়ে।” পরে  ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাঠচক্র সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শিবিরের জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আমিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময়ে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াত মনোনীত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক এবং যশোর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু মুসা।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলার সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির শান্ত, মোঃ আরিফুল ইসলাম, জেলা অফিস সম্পাদক হাফেজ মাসুম বিল্লাহ, জেলা অর্থ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা সাহিত্য সম্পাদক আবু রায়হান ও জেলা দাওয়াহ সম্পাদক পারভেজ আলমসহ বিভিন্ন থানার সভাপতি ও পাঠচক্র সদস্যবৃন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *